ইন্দোনেশিয়ায় ৬ মাসে দেড় লাখ মানুষের সনাতন ধর্ম গ্রহণের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “ইন্দনেশিয়ায় ৬ (ছয়) মাসে সনাতন ধর্মে গ্রহণ করলো ১৫০০০০ জন। উল্লেখ্য ইন্দনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সুক্লাবর্তি সুকন্যার সনাতন ধর্ম গ্রহণের পড় থেকে প্রচুর হারে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্ম গ্রহণ” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে। ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের মেয়ে সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রি সনাতন ধর্ম গ্রহণের পর ৬ মাসে দেড় লাখ জনের হিন্দু ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি সত্য নয় বরং ভিত্তিহীনভাবে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র ছাড়াই উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।


অনুসন্ধানে, CNN Indonesia এর প্রতিবেদনে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকার্নোর মেয়ে সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রি ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর নিজের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন সে বিষয়ক সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রির হিন্দু ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

হিন্দু ধর্ম গ্রহণ নিয়ে সুকমাবতীর একটি প্রেস কনফারেন্সে বলা বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি জানান,

 “তিনি তার ৭০ তম জন্মদিনে তার বালিনিজ পিতামহীর বিশ্বাস হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।”

তবে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের মেয়ে সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রির হিন্দু ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি সত্য হলেও তার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পর ৬ মাসে দেড় লাখ জনের হিন্দু ধর্ম গ্রহণের দাবির সত্যতা মেলেনি।

রিউমর স্ক্যানার টিমের বিস্তর অনুসন্ধানে তার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পরবর্তী সময়ে ৬ মাসে দেড় লাখ মানুষ ইন্দোনেশিয়াতে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে এমন দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও এ ধরণের কোন সংবাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইন্দোনেশিয়ান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Tempo CheckFacta এর সাথে যোগাযোগ করলে তারা রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে নিশ্চিত করে জানায়,

“ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার দেশ, তাই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে দাবি করার বিষয়টি সঠিক নয়। মূলত সে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতির মেয়ে।”

সুকমাবতী সুকোর্ণপুত্রীর হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পর ৬ মাসে দেড় লাখ মানুষ হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে এর কোনো সরকারী তথ্য বা উৎস নেই। ইন্টারনেটে প্রচারিত পোস্টগুলিতেও কোন সোর্স এবং কিভাবে এই সংখ্যা এসেছে তার কোন বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি। ২০২১ সালের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, হিন্দুধর্ম ইন্দোনেশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম, যা ইন্দোনেশিয়ার ২৭২.২৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ১.৭০ শতাংশ। দেড় লাখ মানুষের হিন্দু ধর্ম গ্রহণের এ দাবিটি ভিত্তিহীন ও সন্দেহজনক।”

অনুসন্ধানে প্রায় একই ধরণের একটি গুজবের ফ্যাক্টচেক ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ‘The Quint’ এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। সেখানে সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রির সনাতন ধর্ম গ্রহণের প্রেক্ষিতে ৩০ হাজার জন সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে শীর্ষক দাবিটির ফ্যাক্টচেক করে তারা। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বরে “Did Indonesia’s ‘Queen’ Convert to Hinduism With 30,000 Followers? No!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকে বিষয়টিকে তারা মিথ্যা বলে চিহ্নিত করে।

দ্যা কুইন্ট বাদেও তার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পর ৩০ হাজার মানুষ হিন্দু ধর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে শীর্ষক তথ্যটিকে সেসময় ফ্যাক্টচেক করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা AFP এবং BOOM। ফ্যাক্টচেকে তারা বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায় নি বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

মূলত, ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্নোর কন্যা দিয়াহ মুতিয়ারা সুকমাওয়াতি সোকর্নোপুত্রি ৭০ বছর বয়সে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার খবর গত বছর প্রাকশিত হয়। তার ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনায় সেসময় তার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের প্রেক্ষিতে ৩০ হাজার মানুষ সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছে শীর্ষক দাবিটি প্রচারিত হয়, যা ভারতীয় ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যা বলে চিহ্নিত করে। সম্প্রতি সোকর্নোপুত্রির হিন্দু ধর্ম গ্রহণের ঘটনার পর ইন্দোনেশিয়ায় ৬ মাসে দেড় লাখ মানুষ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে শীর্ষক প্রায় অনুরুপ দাবিটি বাংলাদেশে ভিত্তিহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ মাসে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করলো ১৫০০০০ জন শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img