গত জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর দমন নীতির মুখে এই আন্দোলন দ্রুত সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়। আন্দোলনের চাপে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন, যা আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়। এ পরিষদে দুই ছাত্রনেতা, নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ছয় বাংলাদেশি ছাত্রনেতার ওপর ভারত ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দাবি অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম এবং নুসরাত তাবাসসুমের নাম রয়েছে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন – দ্য মিরর এশিয়া, নয়া দিগন্ত, বাংলাভিশন, বার্তা বাজার, জুম বাংলা, ভোরের পাতা (ফেসবুক), ফেস দ্য পিপল (ফেসবুক), দৈনিক সংগ্রাম, ইনসাফ, আমার সংবাদ,
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরটি মিথ্যা। ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই দাবিটিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছে।
এই গুজবের সূত্রপাত ‘দ্য মিরর এশিয়া’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদন থেকে। অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সূত্রও এই অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদন। গত ১ সেপ্টেম্বর মিরর এশিয়া তাদের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মৌখিক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। দিল্লিতে কর্মরত কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, ভারতের কোনো প্রধান গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কোনো কর্মকর্তাও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে, ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানিয়েছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটি মিথ্যা। ভারতের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সহ একাধিক গণমাধ্যমও (১,২) এই তথ্য গুজব জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এছাড়া ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা এনডিটিভির সাংবাদিক কদম্বিনী শর্মা রিউমর স্ক্যানার টিমকে জানান, ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবিটি ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি, এটা নিশ্চিত।’
কদম্বিনী শর্মা আলোচিত দাবি ওঠার দুইদিন আগে গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা প্রদান প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্যের কথা জানান। সেদিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপিত হলে ভিসা প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হবে।’ সেখানে কোনো ছাত্রনেতার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম গণমাধ্যমকে জানান, দ্য মিরর এশিয়ার প্রতিবেদন ছাড়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানি না। ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
সুতরাং, ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Kadambini Sharma, Journalist, Delhi Office, NDTV.
- Press Trust of India – Reports claiming visa ban by India on 6 Bangladeshi student leaders fake news: Sources
- DD News – India denies visa ban on Bangladeshi student leaders, shuts down ‘fake news’ claims
- India Today – India calls visa ban on 6 Bangladeshi student leaders fake news
- The Free Press Journal – Visa Ban Claims On 6 Bangladeshi Student Leaders Dismissed As ‘Fake News’ By Indian Officials
- The Economic Times – We are issuing visas in limited manner for medical, emergency purposes: MEA on visa issues in Bangladesh
- RTV – ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন, যা বললেন সমন্বয়ক নুসরাত