হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্য দাবিতে ভারতীয় ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণ-তরুণীর চুম্বনের ছবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে যাতে লেখা রয়েছে, ‘ভাইরাল হাসনাত আবদুল্লাহ আর তাসনিম জারার চুমাচুমির ভিডিও’। ফটোকার্ডটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, ফটোকার্ডটি মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র আদলে হলেও এতে ‘কালবেলা’র বদলে ‘কামবেলা’ লেখা রয়েছে। তবে কিছু পোস্টের ক্যাপশনে ‘নিউজ কালবেলা’ লেখা হয়েছে। এবং কিছু পোস্টের কমেন্টে পোস্টকারী তথ্যপ্রমাণ হিসেবে গাড়ির পেছন থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও সংযুক্ত করেছেন যাতে এক তরুণ ও তরুণীকে চলন্ত গাড়িতে চুম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। 

অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে প্রচারিত চুম্বনের ছবি ও ভিডিওটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবি বা ভিডিওটি হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের এক যুগলের চুম্বনের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘গুরু চরণ প্রামাণিক’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৮ আগস্টে সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে লোকেশন হিসেবে ‘জামশেদপুর’ ট্যাগ থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে, ভারতের ঝাড়খণ্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ১১ ভারত’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৩১ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ও ছবির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “মেট্রো, গাড়ি, বাইকের পরে এবার অটোতে রোমান্স করতে দেখা গেল যুগলকে, জামশেদপুরের ভিডিও ভাইরাল..!” (অনূদিত)
গত ৩১ আগস্টে ‘ঝাড়খণ্ড ক্রাইম’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘায়িত সংস্করণ পাওয়া যায়। পোস্টটিতেও আলোচিত ভিডিওটি ভারতের জামশেদপুরের বলা হয়। অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি আরো একাধিক ভারতীয় অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের ভিডিও দাবিতেপ্রচার হতে দেখা যায়।

এছাড়া, প্রচারিত ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সেখানে থাকা তরুণের শারীরিক গঠন, চুলের ধরন ও মুখাবয়বের সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহর মিল নেই। পাশাপাশি, ভিডিওতে তরুণকে চশমা পরা অবস্থায় দেখা গেলেও হাসনাত আবদুল্লাহ সাধারণত চশমা ব্যবহার করেন না।

Comparison: Rumor Scanner. 

অন্যদিকে, প্রচারিত ভিডিওটিতে চুম্বনরত যুগলের গাড়ির নাম্বারপ্লেটে থাকা নাম্বারও দেখতে পাওয়া যায়। গাড়িটির নাম্বার দেখা যায়: ‘JH05DC 4650’। এছাড়াও, ভিডিওটিতে ‘JH05’ দিয়ে শুরু হওয়া নাম্বারপ্লেটের আরেকটি গাড়িও দেখা যায়। গাড়ির নাম্বারপ্লেটটি দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলো বাংলাদেশে চলাচল করা গাড়ি নয়। পরবর্তীতে উক্ত নাম্বারপ্লেটের কোডের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে কার ইনফো, পলিসি বাজারসহ একাধিক অনলাইন পোর্টালের সূত্রে জানা যায়, JH05 দিয়ে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের আঞ্চলিক পরিবহন দপ্তরে নিবন্ধিত গাড়িগুলো বুঝিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ‘JH’ বলতে ঝাড়খণ্ড রাজ্য এবং ‘05’ বলতে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর অঞ্চল বুঝানো হয়ে থাকে।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কিংবা হাসনাত আবদুল্লাহর নয়।

সুতরাং, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরের এক যুগলের চুম্বনের দৃশ্য এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারার চুম্বনের দৃশ্যের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img