সম্প্রতি, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইলেন ভারত, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারত কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত ০৬ আগস্ট Al Minar নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইলেন ভারত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
১৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে বলা হয়, “বহিঃবিশ্ব থেকে শুরু করে এখন আপনজন প্রতিবেশী দেশ ভারত পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে বয়কট করলেন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে এবং সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেখার জন্যে তারাও জাতিসংঘকে বিবৃতি প্রদান করলেন। তাতে করে কিন্তু শেখ হাসিনার দফারফা শুরু হয়ে গেছে। পদত্যাগ অতি নিকটে।”
এরপরই উপস্থাপক দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নাঈম নামের একজন ব্যক্তি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন দাবি করে একটি ভিডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখান। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দৈনিক ইনকিলাব-র অনলাইন পোর্টালে গত ০৩ আগস্ট ‘জনগণ ঠিক করবে বাংলাদেশে নির্বাচন কিভাবে হবে : অরিন্দম বাগচি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদের খোঁজ পাওয়া যায়। উক্ত ব্যক্তি তার ভিডিওতে সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির বক্তব্যের অংশটুকু রিডিং পড়ে শোনান। যেখানে ভারতের শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রকার তথ্য নেই।
এরপর উপস্থাপক নাজমুল হাসান নামের আরেকজন ব্যক্তির ভিডিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখান। পূর্বের ভিডিওর মত এখানেও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত অরিন্দম বাগচির বক্তব্যকে পাঠ করে নানা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়। তবে এখানেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উক্ত দাবির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লিখিত দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো নাঈম ও নাজমুল হাসান নামের ব্যক্তিদের ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় নাঈম নামের এই ব্যক্তি প্রায়ই বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে ইউটিউবে রাজনৈতিক নানা বিষয়ে এমন ভিডিও প্রকাশ করেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে New York Voice নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ভারত কি হাসিনার পক্ষ ত্যাগ করল ? #Nazmul_Hasan #New_York_Voice’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত নাজমুল হাসানের সেই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ব্যক্তির ইউটিউব চ্যানেল পর্যলোচনা করে দেখা যায়, তিনিও আগের ব্যক্তির মত নানা সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে থাম্বনেইল ও শিরোনাম তৈরি করে ভিডিও প্রচার করেন।
অর্থাৎ, ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায় দাবি করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি কোনো মন্তব্যই করেননি।
মূলত, সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইলেন ভারত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নাম উদ্ধৃত করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই এবং আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাওয়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্যই করেননি।
প্রসঙ্গত, গত ৩ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই ভোট হবে। আমরা সেটাই মেনে নেব।’
সুতরাং, ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায় দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Daily Inqilab: জনগণ ঠিক করবে বাংলাদেশে নির্বাচন কিভাবে হবে : অরিন্দম বাগচি
- Kaler Kantho: জনগণ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই বাংলাদেশে ভোট হবে : নয়াদিল্লি
- Rumor Scanner’s Own Analysis