হিন্দু মেয়ের ওপর অ্যাসিড হামলার নয়, ভিডিওটি টিয়ার শেলের গ্যাসে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর

সম্প্রতি, বাংলাদেশের মুসলিমরা হিন্দু মেয়ের মুখে অ্যাসিড দিয়ে হামলা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণী তার মুখ হাত ও ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রেখেছেন এবং তার আশেপাশে থাকা কয়েকজন যুবক পানি চেয়ে চিৎকার করছেন।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক


রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দু মেয়ের মুখে অ্যাসিড হামলার ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি সচিবালয়ের সামনে নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় টিয়ার শেলের গ্যাসে আক্রান্ত এক নারী শিক্ষার্থীর ভিডিও।

দাবিকৃত ভিডিওটির কিছু মূল ফ্রেম রিভার্স রিভার্স ইমেজ সার্চ করে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেজে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘সচিবালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে দেখানো দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল দেখা যায়।

Comparison: Rumor Scanner.

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ক্যামেরার পেছনে থাকা সাংবাদিক বলছিলেন, পুলিশের ধাওয়ায় একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একই সময়ে, আরেকজন জানান, তার চোখে টিয়ার শেলের আঘাত লেগেছে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এক নারী রিকশায় বসে ব্যাগ ও হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন, এবং তার পাশে থাকা একজন তার জন্য পানি খুঁজছিলেন। এ সময়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন পরামর্শ দেন, টিয়ার শেলের গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে পানি না দিয়ে লাইটারের আগুন মুখের সামনে ধরতে। এরপর, আরেকজন ওই নারীর মুখ থেকে ব্যাগ সরানোর পরামর্শ দেন, যেন তার মুখের সামনে আগুন ধরানো যায়। একই সময় একজন ক্যামেরা বন্ধ করার অনুরোধ জানালে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক ক্যামেরা সরিয়ে নেন।

অর্থাৎ, ভিডিওটির সঙ্গে অ্যাসিড হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।

১৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে সেদিন সচিবালয়ের সামনের ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজটি তাঁত বোর্ডের অধীন থেকে বস্ত্র অধিদপ্তরের আওতায় স্থানান্তর ও নিজস্ব ক্যাম্পাসের দাবিতে কিছু মাস ধরে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি উপেক্ষা করে কলেজটি বন্ধ করে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলে তারা ১৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা উপদেষ্টার উপস্থিতি ছাড়া সচিবের সঙ্গে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে। সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান, লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে।

আলোচিত ভিডিওতে থাকা নারীর পরিচয় অনুসন্ধানে সেদিনের আন্দোলনে আহত মো. অর্নব আকন্দ ওরফে তিহাদ অর্নব নামের একজন শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভিডিওতে থাকা নারী তার সহপাঠী এবং তার মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

অর্নবের মাধ্যমে জানা যায়, ঘটনার সময় ওই নারীর সঙ্গে রিকশায় থাকা ব্যক্তির নাম আশিকুজ্জামান লিমন। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন, ভিডিওতে দেখা নারী তার সিনিয়র এবং তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তবে তার মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

Face Comparison: Rumor Scanner.

লিমন ব্যাখ্যা করেন, আন্দোলনের সময় ওই নারী শিক্ষার্থী সামনে থাকায় টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি তাকে দ্রুত একটি রিকশায় তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় গণমাধ্যমের ক্যামেরা থেকে নিজেকে আড়াল করতে ওই নারী ব্যাগ ও হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন।

উল্লেখ্য, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা নারীর নাম ও পূর্ণ পরিচয় জানা গেলেও, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার এবং পরবর্তীতে ওই একই ভিডিও নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় তিনি বর্তমানে মানসিক চাপে রয়েছেন। তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বিবেচনা করে এবং তার পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই প্রতিবেদনে তার নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

সুতরাং, বাংলাদেশের মুসলিমরা হিন্দু মেয়ের মুখে অ্যাসিড দিয়ে হামলা করেছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img