Google শব্দের কি কোনো পূর্ণরূপ আছে?

সম্প্রতি “GOOGLE এর পূর্ণরূপ —Global Organization of Oriented Group Language of Earth” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সার্চ ইঞ্জিন গুগলের পূর্ণরূপ Global Organization of Oriented Group Language of Earth- তথ্যটি সঠিক নয় বরং Google শব্দটি গাণিতিক Googol শব্দের ইংরেজি ভুল বানান, যার কোনো পূর্ণরূপ নেই।

গুগলের পূর্ণরূপের তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের About অংশে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ওয়েবসাইটটির Our History অংশে From the garage to the Googleplex শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from google (about) website

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গুগলের শুরুতে এর নাম ছিল Backrub। পরবর্তীতে এটি পরিবর্তন করে গুগল (Google) রাখা হয়। গুগল শব্দটা উৎপত্তি ‘গুগোল’ (Googol) থেকে – যা একটি বিশেষ সংখ্যা,  ১ এর পিঠে ১০০টা শূন্য বসালে যা হয় তার নাম।

পরবর্তীতে বিশ্ব তথ্যকোষ Britannia এর ওয়েবসাইটে পাওয়া গুগলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, যাত্রা শুরুর পর ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝিতে ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন বাইরে থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেতে শুরু করেন। এভাবে তারা বিনিয়োগকারী, পরিবার ও বন্ধুদের থেকে  প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের সহযোগিতা তুলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানলো পার্কে একটি অফিস খুলেন Google নামে। যা ল্যারি পেজের প্রস্তাবিত নাম (Googol, যার অর্থ ১ এর পিঠে ১০০টা শূন্য বসানোর পর গঠিত সংখ্যা) এর ভুল বানান। পরবর্তীতে এই নামেই তারা পরিচিত পায়।

Screenshot from britannica website

অপরদিকে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Factly.in এর ওয়েবসাইটে ১৪ ডিসেম্বর “The word ‘Google’ was derived from the mathematical number Googol; officially Google has no full form” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ল্যারি পেজ এবং তার অন্যান্য সহকর্মীরা বর্ধনশীল সার্চ প্রযুক্তির জন্য সম্ভাব্য নাম নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় সেন অ্যান্ডারসন নামে তাদের এক সহকর্মী googolplex নামটির ব্যাপারে মতামত দেন।  ল্যারি পেজ এটিকে সংক্ষিপ্ত করে googol রাখার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, googolplex ও googol দুইটি শব্দি বৃহৎ আকারের সংখ্যা বোঝায়৷ পরবর্তীতে সেন অ্যান্ডারসন এই নামে ইন্টারনেট ডোমেইন নিবন্ধন করতে গিয়ে googol এর পরিবর্তে google.com লিখে ফেলেন। যেটিকে ল্যারি পেজও পছন্দ করেন।

এছাড়া ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর “গুগল সম্পর্কে যে ১০টি তথ্য হয়তো আপনার জানা নেই” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from bbc website

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, Goggle নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (Googol) কে ভুল করে লেখার মাধ্যমে-যার অর্থ হলো ১ এর পর একশোটি শূন্য। এ নিয়ে এখন অনেক গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে।

মূলত, সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান গুগলের (Google)  নামকরণ করা হয়েছিল গাণিতিক শব্দ Googol থেকে৷ যার অর্থ হলো ১ এর পর একশোটি শূন্য। ফলে Google শব্দের কোনো পূর্ণরূপ নেই৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই Google এর পূর্ণরূপ হিসেবে “Global Organization of Oriented Group Language of Earth” তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ইঞ্জিন গুগলের পূর্ণরূপ Global Organization of Oriented Group Language of Earth- দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img