সম্প্রতি, সকল জ্বালানি তেলের দাম কমেছে দাবিতে জ্বালানি তেলের মূল্য তালিকা সম্বলিত সরকারি গ্যাজেটের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি। প্রকৃতপক্ষে, জ্বালানি তেলের বিপণন প্রতিষ্ঠান এবং ডিলার পর্যায়ে কমিশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূল্য সমন্বয় সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ০৩ অক্টোবর ‘বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি, শুধু ডিলারদের কমিশন বেড়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গত সোমবার(০২ অক্টোবর) একটি গেজেট প্রকাশ করেছে, যেখানে ‘তেল বিপণন কোম্পানি’গুলোর কাছে কত দামে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হবে এবং এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ কত হবে, সেই তালিকা দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেল ১০১ টাকা ৪৪ পয়সা, কেরোসিন ১০২ টাকা ৩১ পয়সা, অকটেন ১১৯ টাকা ৬২ পয়সা এবং পেট্রোল ১১৪ টাকা ৮৬ পয়সা দরে তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরবরাহ করবে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে জ্বালানি তেলের রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই দামে জ্বালানি তেল কিনবে।
এছাড়া, বর্তমানে ভোক্তা বা খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা এবং পেট্রোল ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধির নতুন প্রজ্ঞাপনেও এই দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ০৩ অক্টোবর জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্যের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তেলের দাম স্থিতিশীল আছে৷ দাম বাড়েওনি, কমেওনি। যারা তেল সরবরাহ করে তাদের কমিশনের ক্ষেত্রে একটা ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে। অনেকে গ্যাজেটের ছবির প্রথম অংশ দিয়ে বলেছে, তেলের দাম কমেছে কিন্তু দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ট্যাক্সের বিষয়টি যোগ হয়েছে সেটা দেখানো হয়নি। তিনি দাম কমানোর বিষয়টিকে গুজব হিসেবে আখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদেরকেও এবিষয়ে কথা বলার আহ্বান জানান।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম কমার বিষয়টি সঠিক নয়।
মূলত, গত ২ অক্টোবর বিপণন প্রতিষ্ঠান এবং ডিলার পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধির জন্য ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের নতুন মূল্য তালিকা নিয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে সেই গ্যাজেটের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে খুচরা পর্যায়ে সকল জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিলার পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি, অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন যাবত জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এই দাবির প্রেক্ষিতে গত ০১ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে খুলনার রাষ্ট্রয়ত্ত্ব তিন ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও ১৫ জেলায় পরিবহণ বন্ধ রাখেন তারা। পরবর্তীতে ওইদিন রাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে কমিশন বৃদ্ধির আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট তুলে নেয় তারা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও জ্বালানি তেলের মূল্য তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিপণন প্রতিষ্ঠান ও ডিলার পর্যায়ে জ্বালানি তেলের নতুন দর কাঠামো সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিকে খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে সকল জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রজ্ঞাপন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- The Daily Star: বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি, শুধু ডিলারদের কমিশন বেড়েছে
- Ministry of Power, Energy and Mineral Resources, Bangladesh: Facebook Post
- Rumor Scanner’s Own Analysis