সম্প্রতি,“এবার প্রকাশ্যেই নারীর চড় খেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
একই দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন – কালের কন্ঠ (ইংরেজি), কালের কন্ঠ (বাংলা), ডেইলি ক্যাম্পাস, ইনকিলাব, ঢাকা ট্রিবিউন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, কালবেলা, ঢাকা পোস্ট, বিডি জার্নাল, আমাদের সময়, আরটিভি, বৈশাখী টিভি, বিডি মর্নিং, ঢাকা টাইমস, বাংলাদেশ টুডে, বাংলা নিউজ২৪, ফ্রিডম বাংলা এবং বায়ান্ন নিউজ।
একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন – হিন্দুস্তান টাইমস।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
একই দাবিতে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও দেখুন – এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন – এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে এক নারীর চড় দেওয়ার প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২১ সালে এক পুরুষ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে চড় মেরেছিলেন।
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি ম্যাঁক্রোকে চড় মারছেন। ভিডিওটি চড় মারা ব্যক্তির পেছন থেকে ধারণ করা।
পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে ইউটিউবে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের চ্যানেলে ২০২১ সালের ৯ জুন “The moment Macron gets slapped during meet-and-greet” শিরোনামে প্রকাশিত ম্যাক্রোঁকে চড় মারার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ম্যাক্রোঁকে চড় মারার এই ভিডিওটির সাথে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সে সময় একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও (Saudi Gazette, Al Jazeera) এ সংক্রান্ত খবর ও ভিডিও প্রকাশ হতে দেখা যায়।
রয়টার্স প্রকাশিত উক্ত সময়ের ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে চড় মারা ব্যক্তির পোশাকের সাথে এই ভিডিওতে চড় মারা ব্যক্তির পোশাকের রং একই। বর্তমানে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি যে কোণ থেকে ধারণ করা, সে সময়ের ভিডিওটি অন্য কোণ থেকে ধারণ করা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্স শহরের বাইরের টেইন-ই হারমিটেট এলাকায় ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে হাত মেলানোর সময় উঁচু প্রতিবন্ধকতার (গ্রিল) বিপরীত দিক থেকে এক যুবকের দিকে প্রেসিডেন্ট হাত বাড়িয়ে দিলে ওই যুবক ম্যাক্রোঁর গালে সজোরে চড় মারেন। পরে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ম্যাক্রোঁকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেন।
অভিযুক্ত যুবক ডেমিয়েন টারেলের আইনজীবী জুয়ান ব্রান্কো নিশ্চিত করেছেন, সাম্প্রতিক ভিডিওটি ২০২১ সালের ঘটনারই।
অর্থাৎ, ২০২১ সালে ম্যাক্রোঁকে চড় মারার ঘটনায় সে সময়ের ভিডিওটি যে কোণ থেকে করা হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি একই ঘটনায় অন্য কোণ থেকে ধারণ করা। এর মানে, দুইটি ভিন্ন কোণ থেকে করা একই ঘটনার ভিডিও এটি। একই ঘটনার ভিডিওকে চলতি মাসে (নভেম্বর) ফের শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে ম্যাক্রোঁকে আবার চড় মারা হয়েছে।
চড় মারা ব্যক্তি কি নারী?
একাধিক গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের ম্যাক্রোঁকে চড় মারা বিষয়ে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চড় মারা ব্যক্তিটি ছিলেন একজন নারী।
উক্ত ব্যক্তির লম্বা চুল থাকায় তাকে নারী হিসেবে দাবি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তবে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে উক্ত ব্যক্তিকে পুরুষ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন – নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা, এনবিসি।
মূলত, ২০২১ সালের ৮ জুন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে এক ব্যক্তি কর্তৃক থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটেছিলো। উক্ত ঘটনার পুরোনো একটি ভিডিও সংযুক্ত করে ‘আবারও চড় খেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ শীর্ষক দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। কিছু গণমাধ্যমে “এবার নারীর চড় খেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট” শীর্ষক সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তবে ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা ভিডিও দেখে বুঝা যাচ্ছে নারী নয় বরং থাপ্পড় মারা মানুষটি লম্বা চুলের এক পুরুষ।
উল্লেখ্য, চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত ডেমিয়েন টারেলকে চার মাসের জেল দেওয়া হয় সেসময়।
সুতরাং, ২০২১ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে এক পুরুষ ব্যক্তির চড় মারার ঘটনার নতুন একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ফের ম্যাক্রোঁর নারী কর্তৃক চড় খাওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।