ভারতকে হুশিয়ারি বার্তা দেওয়া ভিডিওর ব্যক্তি বর্তমান নয়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা

সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে হুশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। পোস্টটিতে দাবি করা হয়, গত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসন শেষে এই প্রথম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্যদের উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত কর্মকর্তারা হুশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি নয়। বরং, গত ৭ ডিসেম্বর ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের দ্বারা আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশের ভিডিও ফুটেজকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে একজন ব্যক্তিকে ‘আমি মোদি সরকারকে একটা বার্তা দিতে চাই। মোদি জি, অমিত জি এবং রাজনাথ সিং জি আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেটা দেখেছেন ৭২ সালের। সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যুদ্ধপযোগী এবং যেকোনো শত্রুর মোকাবেলায় প্রযুস্ত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না। ইস্টার্ন সেক্টর, ইস্টার্ন কমান্ড গুছানের ভয় আমাদেরকে দেখাবেন না। শুধু আমরা সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সাথে আপনাদেরকে সীমান্তেই রুখে দিতে।’ শীর্ষক বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়। এছাড়াও ভিডিওটির ডানপাশে উপরের দিকে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন বাংলার লোগো দেখতে পাওয়া যায়।

এর সূত্রে এটিএন বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ ডিসেম্বর মোদি সরকারকে সাবেক সেনা কর্মকর্তার কঠোর বার্তা | শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি সেনাবাহিনীর নিয়মিত কর্মকর্তা নন, বরং সাবেক কর্মকর্তা।

পরবর্তী অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একইদিনে প্রকাশিত আলোচিত ঘটনার ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে উক্ত ব্যক্তি ব্যতীতও আরেকজন ব্যক্তিকে বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম এবং বক্তাদের পেছনে ধরে রাখা প্লাকার্ড থেকে জানা যায়, ভিডিওটি সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দদের একটি কর্মসূচির।

Screenshot: Youtube

পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার ওয়েবসাইটে ৭ ডিসেম্বর সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সমাবেশে জাতীয় ঐক্যের ডাক ভারত প্রশ্নে ‘সাম্যতার ভিত্তিতে’ পররাষ্ট্রনীতি চান সশস্ত্র বাহিনীর সাবেকরা শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর অফিসারদের সংগঠন রাওয়া ক্লাবের সামনে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেন। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ানের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর বক্তব্যের মিল রয়েছে।  

এছাড়াও পরবর্তীতে রাওয়া ক্লাবের ওয়েবসাইট পর্যালোচনার মাধ্যমে রাওয়া ক্লাবের মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের তালিকায় ক্রমিক নম্বর ৮৭ তে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ানের নাম খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Raowa

সুতরাং, সাবেক কর্মকর্তার বক্তব্যকে সেনাবাহিনীর নিয়মিত কর্মকর্তার ভারতের উদ্দেশ্যে দেওয়া হুশিয়ারি বার্তার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img