সম্প্রতি, “ইরানী মেয়েদের চুলের তৈরি পতাকা” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে প্রচারিত হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

টুইটারে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানি মেয়েদের চুলের তৈরি পতাকা দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ইরানে হিজাব আইন বিরোধী আন্দোলনের নয় বরং এটি বেলজিয়ামের শিল্পী এডিথ ডেকিন্ডের একটি শিল্পকর্ম।
গুগলে বিপরীত চিত্র অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Ombre indigène‘ নামের একটি ক্যাটালগে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যাটালগটিতে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে তোলার তারিখ ২০১৪ সাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছবিটির বর্ণনা অংশে বলা হয়েছে, এই পতাকাটি চুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, যা মাটিতে আটকে ছিল এবং ফ্রান্সের মার্টিনিকের ডায়ম্যান্ট কোস্টের পাথরে চিত্রায়িত হয়েছিল।

এছাড়া, ‘eflux‘ নামের ওয়েবসাইটেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সাইটে ছবিটির ক্যাপশনে ছবির নির্মাণ শিল্পী হিসেবে এডিথ ডেকিন্ডের নাম উল্লেখ রয়েছে। উক্ত সাইটে ছবিটি ২০১৬ সালে আপলোড করা হয়েছিলো।

পরবর্তীতে, শিল্পী এডিথ ডেকিন্ডের ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে শিল্প প্রদর্শনীর একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ০:০৮ সেকেন্ড একটি চুলের পতাকাটি বাতাসে উড়তে দেখা যায়, যেটি সঙ্গে আলোচিত চুলের পতাকাটির হুবহু মিল রয়েছে।
মূলত, ইরানে গত সেপ্টেম্বরে হিজাব ঠিকভাবে না পরার অভিযোগে মোরাল পুলিশের হাতে আটক মাশা আমিনি নামের এক তরুণী পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর পর হিজাব আইনের বিরুদ্ধে ইরান জুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। উক্ত আন্দোলনে হিজাব আইনের বিরুদ্ধে অনেক নারী চুল কেটে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে চুল দিয়ে তৈরি পতাকার একটি শিল্পকর্মকে ইরানি মেয়েদের চুলের তৈরি পতাকা দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইরানে হিজাব আইন বিরোধী আন্দোলনকারী নারীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ইরানি শিল্পী বাহাদুর হাদিজাদেহ সম্প্রতি তেহরানের আইকনিক আজাদি টাওয়ারের একটি অ্যানিমেশন তৈরি করেছেন যা বাতাসে উড়ে যাওয়া কালো চুলে সজ্জিত।

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে মোরাল পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর জের ধরে ইরানে হিজাব আইন বিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত ২৩৩ জনের (১৫ অক্টোবর) মৃত্যু হয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। সে সময় থেকে হিজাব আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ করেছেন ইরানি নারীরা।
সুতরাং, ২০১৪ সালে নির্মিত একটি শিল্পকর্মকে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানি মেয়েদের চুলের তৈরি পতাকা দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- PDF- Ombre indigène
- efflux- Edith Dekyndt: Indigenous Shadow
- Ombre Indigène Website- Ombre Indigène, 2016
- Bahadur Hadizadeh – Animation
- First Post- Artist expresses solidarity with protesting Iranian women, creates ‘unique’ animation on Azadi Tower
- VOA- Rights Group: 233 Killed in Iran, Protests Entering Fifth Week
- The Guardian- Hengameh Golestan’s best photograph: Iranian women rebel against the 1979 hijab law