তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গনঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়নি

সম্প্রতি, “হাসিনাকে হুশিয়ার দিয়ে পদত্যাগের নির্দেশ দিলো সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

Screenshot: Youtube

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছে। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিশেষ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে সেনাবাহিনী।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণঅভ্যুত্থানের ডাক কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যগের নির্দেশ দেয়নি বরং, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

গত ৩ আগস্ট Sabai Sikhi(আর্কাইভ) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়।

১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওতে বলা হয়, এবার জনগণকে পাশে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিশেষ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই গণঅভ্যুত্থানে যেকোনো বাধা আসলে তা প্রতিহত করা হবে। এর ফলে, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা যাবে। 

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতীয় এবং আন্তজার্তিক গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে, ভিডিও তৈরিতে ব্যবহৃত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূল সূত্রের অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভিডিওতে ব্যবহৃত একটি ছবি ফিলিস্তিনের আল ইশতিকলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের একটি নিবন্ধে খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধটি থেকে জানা যায়, আল ইশতিকলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র(ক্যাপ্টেন) বাংলাদেশে সিলেটে সেনাবাহিনীর অধীনস্থ স্কুল থেকে ‘ইউনিট এন্ড কমান্ড’ কোর্স সম্পন্ন করার পর ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল।

Image Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, গণঅভ্যুত্থানের সংবাদের সাথে উক্ত ছবির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।

ভিডিওতে ব্যবহৃত অপর একটি ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জার্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান যে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তারা।

Image Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ছবিকে ব্যবহার করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেওয়া কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করেছে দাবিতে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img