তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে সেনাবাহিনীর জরুরি অবস্থা জারির দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরী অবস্থা জারি করলো সেনাবাহিনী‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

গত ২৮ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ছবি থাম্বনেইলে ব্যবহার করে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরী অবস্থা জারি করলো সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকার সময়কার সংবাদ সম্মেলনের একটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পুরোনো কিছু ছবি দেখা যায়।

১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকার সময়কার পুরোনো বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলো সেনাবাহিনী। কারন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। এর ফলে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এরফলে ভোটাররা তাদের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে। এর ফলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান কর্মকর্তা। দেশে নির্বাচনকালীন সময়ে জরুরি অবস্থা জারি করবে সেনাবাহিনী। তাদের যথাযথ ক্ষমতার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর বলে মনে করেন সেনাপ্রধান কর্মকর্তা।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ২৪ সেকেন্ড ‘আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন’ শীর্ষক শিরোনামে ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর Khaled Patwary নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: Khaled Patwary YouTube

এবিষয়ে সাম্প্রতিক দাবি এবং প্রকৃত তথ্যের পাশাপাশি তুলনা দেখুন:

Image Comparison by Rumor Scanner 

তাছাড়া, ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি।

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img