জাতীয় পার্টি বিএনপিতে যোগ দেয়নি, ভুয়া তথ্য ইউটিউবে 

সম্প্রতি, “নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিতে যোগ দিলো জাতীয় পার্টি নির্বাচন বন্ধ করলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

জাতীয় পার্টি

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার  ৮৬২ বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার ১ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিতে যোগ দেয়নি এবং রাষ্ট্রপতি এবং সিইসি নির্বাচন বন্ধও ঘোষণা করেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ৮ মিনিটের এই ভিডিওটি ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।   

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই একটি ভিডিওর ক্লিপ দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, “সারা দেশ থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে জাতীয় পার্টি। শুধু তাই নয় জাতিসংঘে বিএনপির ভয়ঙ্কর চিঠি। দিশা না পেয়ে সব হারিয়ে নির্বাচন বাতিল করছে সিইসি…।” পরবর্তীতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে দুইটি ভিডিও দেখান, যেখানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানকে দেখা যায়।

সংবাদপাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো জিএম কাদেরের ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ০১ জানুয়ারি “শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব কি না সময়ই বলে দেবে: জিএম কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশ আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনে গত ১ জানুয়ারি রংপুর নগরীর কাচারি বাজার কোর্ট এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তবে আলোচিত দাবির বিষয়ে তাকে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। 

ভিডিও যাচাই ০২

পরবর্তী ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বায়ান্ন টিভির  ইউটিউব চ্যানেলে গত ০১ জানুয়ারি “জাতিসংঘ, ইইউ, মার্কিনিরা চিঠি ইস্যু করেছে: বিএনপি নেতা মঈন খান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির একটি অংশ আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওতে ছাত্রদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনকালে তিনি আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এই ভিডিওতেও আলোচিত দাবি কেন্দ্রিক কোনো তথ্য মেলেনি।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে কেনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর “ভোটে থাকার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৩টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলটি। উক্ত প্রতিবেদনে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্ধৃত করে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করছে না। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতির মাঠ। এই নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অনেক আগে থেকেই বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসলেও এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল নানা কৌতূহল। দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে বলে মন্তব্য করেন দলটির চেয়ারম্যান। এরই প্রেক্ষিতে ‘নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিতে যোগ দিলো জাতীয় পার্টি নির্বাচন বন্ধ করলো রাষ্ট্রপতি ও সিইসি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি কিংবা সিইসি নির্বাচন বন্ধ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

সুতরাং, জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিতে যোগ দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতি এ সিইসি নির্বাচন বন্ধ করল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img