বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কার করা হবে জানিয়ে কোনো ঘোষণা ইউনেস্কো বা জাতিসংঘ দেয়নি

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো। যদি দেশ এবং দেশের পরিস্থিতিকে ঠিক করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কার করা হবে! 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনেস্কো কিংবা জাতিসংঘ বা এর অধীনে থাকা কোনো সংস্থাই বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কার করার মর্মে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘের অধীনস্থ একাধিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ সরকারের বহিষ্কার দাবিতে বিশ্বস্ত সূত্রে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা বা অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কোনোরকমের বিবৃতি বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। 

তবে, অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ভলকার তুর্ক জানিয়েছেন, সব রকমের সহিংসতা এবং বলপ্রয়োগ, বিশেষত প্রাণনাশ, এসবের তদন্ত করতে হবে এবং অপরাধীদের বিচার করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছে মৌলিক মানবাধিকার। 

তার বক্তব্যে কোথাও তিনি বাংলাদেশ সরকারের পদত্যাগ বা বহিষ্কারের কোনো উল্লেখ করেননি।

এছাড়া, গত ১৮ জুলাই প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিকে বাংলাদেশে চলমান আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিককে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তিনি জানান, জাতিসংঘ অত্যান্ত নিবিড়ভাবে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে তিনি নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এটির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান।তাছাড়া, তিনি বাংলাদেশ সরকারকে তরুণদের সাথে কাজ করতে এবং চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নির্দেশনা দেন। তবে, তার বক্তব্যেও বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কারের কোনো বিষয় তিনি উল্লেখ করেননি।

তাছাড়া, গত ১৯ জুলাই ডেইলি প্রেস ব্রিফিং এ জাতিসংঘের মহাসচিবের সহকারী মুখপাত্র ফারহান হককেও বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তিনিও এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের হয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষ থেকে সংযতের আহ্বান জানান। তিনি এছাড়াও সব রকমের সহিংসতা তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতাধীন করে মতবিনিময়ের জন্য সহায়ক একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে উৎসাহ প্রদান করেন। তবে তিনিও তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের বহিষ্কারের বিষয়ে কোনো দাবি বা ঘোষণা করেননি।

এদিকে, গত ২৫ জুলাই তারিখে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে আন্দোলনকারীদের ওপর হওয়া ক্র্যাকডাউনের পূর্ণ তথ্য দ্রুততার সাথে প্রকাশ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া, আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমও যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ম মেনে চলে তা নিশ্চিত করতেও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, সরকারের বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

মূলত, সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দমাতে তাদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ, পুলিশসহ বাংলাদেশের একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক  মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো। যদি দেশ এবং দেশের পরিস্থিতিকে ঠিক করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কার করা হবে! কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌক্তিক সমাধানের দাবি করলেও কেউ বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কারের কোনো ঘোষণা বা দাবি জানাননি।

সুতরাং, ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন কেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের অধীনস্থ ইউনেস্কোর তরফ থেকে বহিষ্কার করা হবে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img