সম্প্রতি এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি-ডিবি প্রধানসহ দু’ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উক্ত দাবিটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং অনির্ভর ও ভুঁইফোড় সূত্র ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস এর সহায়তায়, ‘Abdur Rab Bhuttow’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ০১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে “এনএসআই ডিজিএফআই এসবি-ডিবি প্রধানসহ দু’ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত পোস্টে তিনি সূত্র হিসেবে কমেন্টবক্সে দৈনিক আমার দিন নামের একটি পোর্টালের প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করেন।

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কোনো নির্দিষ্ট সূত্রের কথা উল্লেখ না করে উচ্চ পর্যায়ের অজ্ঞাত কূটনৈতিক সূত্রের কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে তাদের কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে আরো একাধিক ভিত্তিহীন তথ্য তুলে ধরা হয়।
তাছাড়া দৈনিক আমার দিন তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একাধিকবার বলেছেন যে, মার্কিন আইন অনুযায়ী ভিসা রেকর্ড অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়। এই নীতির আওতায় যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। এ কারণে প্রায় দু’মাসেরও বেশী আগে এই নিষেধাজ্ঞারোপ করা হলেও এতদিন কারো পক্ষেই তা জানা সম্ভব হয়নি।
অর্থাৎ, মার্কিন আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রকাশ না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তারাই আবার দাবি করছে এতদিন ভিসা রেকর্ডের তথ্য পাওয়া না গেলেও এখন তারা পেয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশ বা দেশের নির্দিষ্ট কোনো সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা তাদের নিজস্ব ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে উল্লেখ্য ব্যক্তিদের নামে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত অনলাইন পোর্টালটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়। তবে দৈনিক আমার দিন এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই এই তথ্যটি ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি, গ্রুপ এবং পেজে ছড়িয়ে পড়ে।
মূলত, দৈনিক আমার দিন নামের একটি পোর্টালের প্রতিবেদনের বরাতে, ‘এনএসআই ডিজিএফআই এসবি-ডিবি প্রধানসহ দু’ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে উক্ত প্রতিবেদনটিতে গ্রহণযোগ্য কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর তা সরিয়েও নেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের নামে স্যাংশন অথবা কোনো বিধিনিষেধ জারি হলে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম গুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হতো। তবে গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর ৯২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, সরকারী ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার মার্কিন ভিসা বাতিল শীর্ষক ভিত্তিহীন দাবিসমূহ নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানী ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY – Website
- United States government : Website
- বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস : Website
- Rumor Scanner’s Own Analysis