সেন্টমার্টিনের সব বাসিন্দাদের দ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার দাবিটি গুজব

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপেছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের সীমান্ত এলাকা। গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে এই বিস্ফোরণ। তবে গতকাল ১৪ জুন শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সব বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের দ্বীপ ছেড়ে উপকূলে চলে আসার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভুয়া তথ্যটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে ফেসবুকের একাধিক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দাবিটির সূত্রপাত জানার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ অনুসন্ধানে জানা যায়, গতকাল ১৪ জুন রাত ১২ টা ১৮ মিনিটে Md Ashikul Islam Ashik নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত উক্ত দাবিতে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করা হয়। পোস্টটিতে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি। 

বরং আলোচিত দাবিটি ফেসবুকে প্রচারের পরবর্তী সময়ে গতকাল ১৪ই জুন প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এমভি বার আউলিয়া নামে একটি জাহাজে করে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে পাঠানো হয়েছে ২০০ মেট্রিক টন খাদ্য। জেলা প্রশাসন বলছে, পাঠানো খাদ্যপণ্য দিয়ে আগামী এক মাস পর্যন্ত চলতে পারবেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় জাহাজটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটিতে পৌঁছায় বলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন এমভি বার আউলিয়া জাহাজের কক্সবাজারের পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।

এছাড়া আলোচিত দাবির বিষয়ে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ উদ দৌলা দ্বীপ রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “না এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপে আছি।” সেন্টমার্টিনে বসবাস করা আরেকজন স্থানীয় ব্যক্তি আমাদের জানান, ‘এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি৷ আমরা সবাই সেন্টমার্টিনেই অবস্থান করছি। গতকাল রাতে খাদ্য এসে পৌঁছেছে সেন্টমার্টিনে। সেন্টমার্টিন ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷’

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি এমন কোনো ঘোষণার বিষয়ে শোনেননি। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: জুবাইরও এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন৷ আলোচিত দাবির বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুর রহমান এর সাথেও কথা বলেছি আমরা। তিনিও বিষয়টি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন। এছাড়া, টেকনাফ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আদনান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনে চলমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ ও আপডেট জানিয়ে সেন্ট মার্টিনের স্থানীয় আইনজীবী ও সংবাদ কর্মী এম কেফায়েত উল্লাহ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। পোস্টটিতে আলোচিত দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেন্টমার্টিনে উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় তিনি জানান, মায়ানমার সরকার ও আরাকান অঞ্চলের বিদ্রোহীদের মধ্যে গুলাগুলি হওয়ার দরুন সেন্ট মার্টিনের ঐতিহ্যগত পথটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। মায়ানমার সরকার সেন্টমার্টিনে কোনো আক্রমণ করেনি বরং বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেন্ট মার্টিন এলাকায় সদা তৎপর। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও দ্বীপবাসী সবাই নিরাপদে আছেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির স্বপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গতকাল ১৪ জুন থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়ে সব বাসিন্দাদের চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়ে উপকূলে চলে আসার কোনো নির্দেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। যা সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া জানা যায়, আলোচিত তথ্য প্রচারের পরবর্তী সময়েও প্রায় এক মাসের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনে একটি জাহাজ পৌঁছেছে।

সুতরাং, সেন্টমার্টিনের সব বাসিন্দাদের দ্বীপ ছেড়ে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img