ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণের সময় আজ রবিবার একটি বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে, সকাল ১১টায় সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসা ফ্লাইট এবিসি-০০১ নামে বিমানটিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দরের জনৈক ফায়ার লিডার মো. আক্তারের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, আগুন লাগার কিছু সময়ের মধ্যেই আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন মানবজমিন, কালবেলা, আরটিভি, যুগান্তর, নিউজজি২৪, অর্থ সংবাদ, বাংলাদেশ জার্নাল, নয়া শতাব্দী, বাহান্ন নিউজ, এবিনিউজ২৪, বহুমাত্রিক, রেডিও টুডে, শেয়ার নিউজ২৪, প্রবাস টাইমস, দেশে বিদেশে, নিউজনাউ২৪, ভিন্ন বার্তা, প্রবাস জার্নাল, নতুন সময়।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় আজ কোনো বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি বরং বিমানে আগুন লাগার পর তা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা নিয়ে হওয়া একটি প্রশিক্ষণ মহড়ার ঘটনাকেই বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টাইমস এর সাংবাদিক সাব্বির আহমেদের ফেসবুক পেজ সাব্বির লাইভ এ আজ সকাল ১১ টায় শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় ১০ মিনিটের এই ভিডিওর শুরুতে জনাব সাব্বির জানান, এবিসি এয়ারলাইনসের একটি প্লেন অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়েছে। এতে ৫০ জন যাত্রী ছিল। আগুন নেভাতে কাজ চলছে। সাব্বির ভিডিওতে জানান, এটি একটি মহড়ার দৃশ্য। তবে সাব্বিরের ভিডিওটির ক্যাপশন দেখে তা শুরুতে বোঝার উপায় ছিল না। রিউমর স্ক্যানার এই লাইভ ভিডিও সম্বলিত পোস্টের এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখেছে, পোস্টটি প্রকাশের প্রথম ১৯ মিনিট পর্যন্ত ক্যাপশনে এটিকে বাস্তব ঘটনা হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই ক্যাপশনকেই কপি করে একাধিক ব্যক্তিকে পোস্ট করতে দেখা গেছে। সাব্বির পরে পোস্টের ক্যাপশন বদলে মহড়া শব্দটি উল্লেখ করেন।
সাব্বির রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “বাস্তবে Abc -নামে কোন এয়ারলাইন্স নাই। এটা এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের একটা পূর্ব পরিকল্পিত আগুনের ঘটনা এবং সেটা নেবানোর দৃশ্য।”
মূলধারার সংবাদমাধ্যম মোহনা টিভির এক ভিডিও প্রতিবেদন, এখন টিভি ও ডিবিসি নিউজের লাইভ ভিডিও থেকেও একই তথ্য জানা যাচ্ছে। Airport Emergency Exercise (Fire) -2024 শিরোনামের এই মহড়ায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মাফিদুর রহমান।
এ বিষয়ে আরো জানতে শাহজালাল বিমানবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর (ফায়ার) আবু সালে মোহাম্মদ খালেদের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার৷ তিনিও নিশ্চিত করেছেন যে এটি মহড়ারই অংশ ছিল৷ গণমাধ্যমে বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি তার নজরে আনলে তিনি জানান, এখানে মহড়ার অংশ শীর্ষক লাইন যুক্ত হবে।
অর্থাৎ, বিমানে আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ মহড়ার একটি ঘটনাকে আসল ভেবে বোকা বনলো গণমাধ্যম!
মূলত, ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণের সময় আজ রবিবার একটি বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো দাবি অনুযায়ী, সকাল ১১টায় সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসা ফ্লাইট এবিসি-০০১ নামে বিমানটিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় আজ কোনো বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, বিমানে আগুন লাগার পর তা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা নিয়ে হওয়া একটি প্রশিক্ষণ মহড়ার ঘটনাকেই বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানে আগুন নিয়ন্ত্রণের মহড়ার ঘটনাকে আগুন লাগার বাস্তব ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে গণমাধ্যমে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Sabbir Live: Facebook Live
- Mohona Tv: Facebook Video
- Ekhon Tv: Live Video
- DBC News: Live Video
- Statement from Sabbir Ahmed
- Statement from Abu Sale Mohammed Khaled, Deputy Director (Fire), Shahjalal Airport
- Rumor Scanner’s own investigation
হালনাগাদ/ Update
০৩ জুন, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে কতিপয় গণমাধ্যমে একই দাবি সম্বলিত সংবাদ আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে সেসব প্রতিবেদনকে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।