সম্প্রতি “কাতার বিশ্বকাপে এক সাপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাতার বিশ্বকাপে এক সপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করার দাবিটি সত্য নয় বরং eDialogue Center নামের ইসলাম প্রচারকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে এক সপ্তাহে ৪২টি দেশের ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং এর সাথে ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২২ এর কোনো যোগসূত্র নেই।
গুজবটির সূত্রপাত যেভাবে
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৯ নভেম্বর অর্থাৎ কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ শুরুর একদিন পূর্বে কিছু ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে এক ব্যক্তির ভিডিও সংযুক্ত করে “ধর্ম প্রচারক ডঃ ফয়সাল আল-হাশমী ঘোষণা করেছেন, কাতারে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল ৫৫৮ জন” শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়।

টুইটগুলোর সূত্র ধরে ফয়সাল আল-হাশমী নামের ব্যক্তির টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচেট ও টেলিগ্রাম চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এসব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে টুইটারে সংযুক্ত উক্ত ভিডিওটি পাওয়া যায়নি। তবে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৫৫৮ জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আলোচিত বিষয়ে একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়।
আরবি ভাষার উক্ত টুইটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুবাদ করা ফয়সাল আল-হাশমীর উক্ত বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“Clarification ..
Thank God then this card
558 converted to Islam within a week from all over the world.
People only understood that it was in the World Cup.
And every Friday we give you good news
The number of those who surrender because of the signed dialogue
Since 2017 I have been collaborating with
Dialogue Corner We distributed these invitation cards in the World Cup – Russia
So they found out..”
যা পড়ে বুঝা যায়, উক্ত টুইটগুলোতে যে ভিডিওটি সংযুক্ত রয়েছে সেটি ফয়সাল আল-হাশমীর বানানো। তবে ভিডিওটিতে থাকা বার্তাকে ভুলভাবে টুইটার অ্যাকাউন্টগুলোতে উপস্থাপন করায় তিনি একটি টুইটের মাধ্যমে ব্যাখা দিয়ে বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন। তার ব্যাখা পড়ে বুঝা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে ৫৫৮ জন ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যক্তিরা শুধুমাত্র কাতার বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে কাতারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী নয় বরং সারা বিশ্বের। ২০১৭ সাল থেকে ফয়সাল আল-হাশমী eDialogue Center নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া মানুষদের সংখ্যা প্রকাশ করেন তারা।
ফয়সাল আল-হাশমীর উক্ত টুইটের সূত্র ধরে সৌদি আরব ভিত্তিক eDialogue Center নামের একটি ইসলাম ধর্ম প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬টি দেশে কাজ করে এবং তাদের মাধ্যমে এখন অবধি ১ লক্ষের বেশি মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। প্রতি সপ্তাহে তাদের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণকারীদের পরিসংখ্যান সপ্তাহের শুক্রবারে প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে ১৮ নভেম্বর শুক্রবার ছিলো। সেদিনও যথারীতি ইসলাম গ্রহণকারীদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। সেদিন তাদের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, উক্ত সপ্তাহে তাদের মাধ্যমে ৪২টি দেশের ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এর পূর্ববর্তী শুক্রবার ১১ নভেম্বরেও যথারীতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। এই সপ্তাহে তাদের মাধ্যমে ৩৭টি দেশের ৬০৫ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে।

বিশ্বকাপ শুরুর পরবর্তী শুক্রবার ২৫ নভেম্বরেও একইভাবে তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। উক্ত সপ্তাহে তাদের মাধ্যমে ৪১টি দেশের ৪৮১জন ইসলাম গ্রহণ করেছে।

অর্থাৎ, বিশ্বকাপের আগের সপ্তাহে eDialogue Center নামের প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এক সপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি বিবর্তিত হয়ে ‘কেবল কাতার বিশ্বকাপে এক সপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহন করেছে’ দাবিতে প্রচারিত হয়েছে।
মূলত, eDialogue Center নামের সৌদি আরব ভিত্তিক ইসলাম প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করে থাকে এবং প্রতি সপ্তাহে তাদের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণকারীদের পরিসংখ্যান সপ্তাহের শুক্রবারে প্রকাশ করে। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে ১৮ নভেম্বর শুক্রবারও যথারীতি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। সেই সপ্তাহে ৪২টি দেশের ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণের তথ্য দিয়েছিলো তারা। উক্ত বিষয়টিই তাদের সাথে কাজ করা ফয়সাল আল-হাশমী নামের এক ব্যক্তি একটি ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরলে পরক্ষণেই সেটি “কাতার বিশ্বকাপে এক সপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে” শীর্ষক দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ফয়সাল আল-হাশমী একটি টুইটের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, কাতার বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বিশ্বকাপ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ৫৫৮ জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি বরং এটা তাদের প্রতি সপ্তাহের স্বাভাবিক কাজ।
সুতরাং, “কাতার বিশ্বকাপে এক সপ্তাহে ৫৫৮ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে” শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Faisal Al hashmi on Twitter – https://twitter.com/FaisalAlhashmi/status/1594803378365816832 (Archive – https://archive.ph/aJtgi)
- eDialogue Center – https://edialogue.info/new/ar#
- eDialogue Center on Facebook – https://www.facebook.com/eDialogueC
- eDialogue Center on Twitter – https://twitter.com/khotwaah
- eDialogue Center on Facebook – https://www.facebook.com/edialoguecenter/posts/5996056677124845
- eDialogue Center on Facebook – https://www.facebook.com/edialoguecenter/posts/5974651455932034
- eDialogue Center on Facebook – https://www.facebook.com/edialoguecenter/posts/6017712628292583