পুলিশের গুলিতে মির্জা ফখরুলের রক্তাক্ত হওয়ার গুজব

গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে “মাঠে নেমেই পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত মির্জা ফখরুল পুলিশকে পিটিয়ে খতম করলো বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

পুলিশের গুলিতে

উক্ত দাবিতেইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওর লিংক কপি করে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৯৭৭ বার এবং ভিডিওটিতে ১২৫ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কর্তৃক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরক গুলি করা কিংবা বিএনপি কর্তৃক পুলিশকে পিটানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ঘটনার পুরনো ভিডিও এবং ছবি যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।  

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবিগুলোর সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানের এপর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১ 

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১৮ জুন “বিএনপির মহাসচিব ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এলাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। 

ভিডিও যাচাই ০২ 

ভিডিওর দ্বিতীয় অংশে পুলিশের সংঘর্ষের একটি ভিডিও দেখানো হয়। এই ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘M A Sahin’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি ভিন্ন এঙ্গেলের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে থাকা ব্যানার এবং ব্যক্তিদের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

প্রেস ক্লাসের সামনে কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। কর্মসূচির এক পর্যায়ে পুলিশ সেখানে বাঁধা প্রদান করে। সেসময়কার একটি ভিডিওকেই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই ০৩ 

আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী অংশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি “গত ৭ জানুয়ারি একতরফা ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ আজ চরম অন্ধকারে নিপতিত -রুহুল কবির রিজভী।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান খুন, ধর্ষণ, গ্যাস ও জ্বালানী সংকট এর প্রতিবাদ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহবান জানিয়ে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে কৃষক দলের পক্ষ থেকে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওতে মির্জা ফখরুলকে দেখা গেলেও ভিডিওর কোথাও তাকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখা যায়নি এবং বিএনপি কর্তৃক পুলিশকে পেটানোর দাবির পক্ষেও কোনো দৃশ্য দেখনো হয়নি। এছাড়া গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো তথ্যসূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “মাঠে নেমেই পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত মির্জা ফখরুল পুলিশকে পিটিয়ে খতম করলো বিএনপি।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে যে,আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে একাধিক ভিন্ন ঘটনার পুরাতন ভিডিও এবং ছবি সহ তাতে চটকদার থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ এবং বিএনপি কর্তৃক পুলিশকে পেটানো হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img