বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চলের এলাকা আরাকান আর্মির দখলের ভুয়া দাবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চলের এলাকা দখল করে নিয়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টেকনাফ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে লিংকড-ইনে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

পাশাপাশি, দখলকৃত জায়গার সংখ্যা উল্লেখ করেও দাবি প্রচার করা হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের ২৭২ কিলোমিটার জায়গা মিয়ানমারের আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন রিপাবলিক বাংলা

উক্ত প্রতিবেদনটির ২০ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ে আলোচিত দাবিটি করা হয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের টেকনাফ এলাকা দখল করেনি বরং বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত দাবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে অধিকাংশ দাবিতেই কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করতে দেখা যায়নি। তবে কিছু দাবিতে নিউজ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বরে নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত মূল প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। দখলে নিয়েছে মংডু শহর। সেই সাথে নাফ নদীর আরাকান জলসীমায় নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। অর্থাৎ, মূল সংবাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের এলাকা আরাকান আর্মি দখল করেছে বলে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের এলাকা দখল করার কথা বলা হয়নি।

৯ ডিসেম্বরে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “মিয়ানমারের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। ফলে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে লড়াইয়ের পর গতকাল রোববার সকালে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে আরাকান আর্মি। আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।” 

এছাড়া, গত ১০ ডিসেম্বরে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডু শহর দখলের দাবি করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। ফলে সীমান্তের প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে  মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এ খবর জানিয়েছে। […] আরাকান আর্মির দাবি, তারা মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিনটি শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এগুলো হলো-রাখাইন রাজ্যের মংডু ও বুথিডং এবং ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন চিন রাজ্যের পালেতোয়া।” 

একই তথ্য জানা যায় বিবিসি বাংলা, দৈনিক ইনকিলাব, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, ঢাকা পোস্টসহ একাধিক গণমাধ্যম থেকেও।

বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা থাইল্যান্ড ভিত্তিক মায়ানমারের নির্বাসিত সাংবাদিকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতীতেও গত ৯ ডিসেম্বরে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও বাংলাদেশের ভূমি বা এলাকা আরাকান আর্মির দখল করার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিনের সাথে। তিনি দাবিটিকে গুজব নিশ্চিত করে জানান, “বাংলাদেশ সীমান্ত দখলে নেয়নি আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মি তাদের (মিয়ানমারের) সীমান্ত এলাকা দখলে নিয়েছে।”

সুতরাং, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চলের এলাকা দখলে নিয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img