শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সম্প্রতি, সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন শেখ হাসিনা নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ দেশে আসবেন এমন একটি দাবি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ দেশে আসবেন এমন কোনো কথা সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেননি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই শেখ হাসিনা নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ দেশে আসবেন এমন কোনো মন্তব্য সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি করেছেন কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির পক্ষে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে, যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘Financial Times’-এ গত ৩০ অক্টোবর ‘Bangladesh’s leader says ‘no place’ for Sheikh Hasina’s ‘fascist’ party’ শীর্ষক শিরোনামে ড. ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

গণমাধ্যমটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘স্বল্প সময়ের জন্য হলেও নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তাঁর (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেই—আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে। তবে তা চাওয়া হবে শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায়ের পর। 

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে অন্তবর্তী সরকার শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। আর রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের অস্থির সময়ের মধ্যে সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ার কথা। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টি তিনি ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই আলোচনায়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে শেখ হাসিনা দেশ ফিরবেন বলে গত আগস্টে জানান তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। যদিও এর আগে এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, তার নিজের বা শেখ পরিবারের কারও রাজনীতিতে ফিরে আসার আর সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন সময়ে কথিত ফোনালাপের বরাতেও শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন শীর্ষক দাবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর আহ্বান জানানোর খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।

সুতরাং, নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ শেখ হাসিনা দেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ও রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis

আরও পড়ুন

spot_img