মুস্তাফিজের বিয়ে সম্পর্কে ভুয়া তথ্য প্রচার

গত ১০ এপ্রিল শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে বাংলাদেশি ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী এর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ‘মোস্তাফিজের জীবন কাহিনী’ টাইটেলে পোস্ট করা ভিডিওটিতে ব্যবহৃত অডিও অনুসারে দাবি করা হচ্ছে, মুস্তাফিজ বলেছেন যখন তিনি বিয়ে করেন তখন তার চাকুরি ছিল না, তার স্ত্রী গোঁ ধরে নানা সংগ্রাম মোকাবেলা করে তাকে বিয়ে করেন। অর্থাৎ, তাদের বিয়ে প্রেমের ছিল।

মুস্তাফিজের বিয়ে

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ১১ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। ৭৯ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত অডিও ভয়েসটি মুস্তাফিজের নয়। তাছাড়া, মুস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিয়ে পারিবারিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কোনো প্রেমের বিয়ে ছিল না।

অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে জীবনকাহিনী বলা ব্যক্তির ভয়েসের সাথে অনলাইনে থাকা মুস্তাফিজুর রহমানের ভয়েসের তুলনা করলে স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, মুস্তাফিজুর রহমানের ভিডিওটিতে ব্যবহৃত কন্ঠস্বরটি মুস্তাফিজুর রহমানের নয়।

তাছাড়া, ভয়েসটি সোলায়মান নামে কারোর অ্যাকাউন্টে প্রথম দিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভয়েসটি ১১ হাজার সাতশত এরও অধিক ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই, ভয়েসটির মূল উৎপত্তিস্থল জানা সম্ভব হয়নি।

অতঃপর ভয়েসটিতে দাবি করা মুস্তাফিজুর রহমানের প্রেমের বিয়ে ও সংগ্রামের কথার সত্যতা যাচাই করতে মুস্তাফিজুর রহমানের বিয়ের সময়কালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেসময় (২০১৯) প্রথম আলোতে “মায়ের পছন্দেই বিয়ে করেছেন মোস্তাফিজ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। 

সংবাদ প্রতিবেদনটিতে মুস্তাফিজুর রহমানের পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানানো হয়, “বিয়ের ক্ষেত্রে মোস্তাফিজ পরিবারের পছন্দকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। শিমুকে (মুস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী) পছন্দ করেছেন আসলে মোস্তাফিজের মা মাহমুদা খাতুন।” অর্থাৎ, মুস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে প্রেমের বিয়ে ছিল এবং স্ত্রীকে বিয়ে করতে অনেক কাঠখোট্টা পোড়ানোর তথ্যটিও মিথ্যা। 

তাছাড়া, মুস্তাফিজুর রহমান ২০১৯ সালে বিয়ে করলেও বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলে তার অভিষেক হয় ২০১৫ সালে৷ তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের তিনি নিয়মিত মুখ৷ তাই, বিয়ে করার সময় মুস্তাফিজুর রহমানের চাকুরি ছিল না, তথ্যটিও মিথ্যা। 

ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ফুটেজটির সাথে ২০১৯ সালে মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তর এ “বিদ্যুত চমকানিতে মুস্তাফিজের নতুন ইনিংস শুরু” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে “মোস্তাফিজের বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠান” টাইটেলে ব্যবহৃত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত অনুষ্ঠানে বা এর পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী সময়েও উক্ত দাবির স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে মুস্তাফিজুর রহমানের কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Comparison : Rumor Scanner

মূলত, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে কোনো এক ব্যক্তির নিজের প্রেমের বিয়েতে কাঠখোট্টা পোড়ানোর একটি ভয়েস অডিও বেশ জনপ্রিয়। সেই ভয়েস অডিওটি মুস্তাফিজুর রহমানের বিয়ের পরবর্তী অনুষ্ঠানের ভিডিওতে সংযোজন করে মুস্তাফিজুর রহমানের জীবন কাহিনী মর্মে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, সেই ভয়েস অডিওটির কোনো তথ্যই মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে সত্য কিংবা প্রাসঙ্গিক নয়।

অর্থাৎ, অনেক কষ্ট ও সংগ্রামের বিনিময়ে মুস্তাফিজ নিজের প্রেমকে বিয়েতে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে প্রচারিত জীবন কাহিনীটি বানোয়াট ও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img