বৃহস্পতিবার, মে 22, 2025

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না শীর্ষক মন্তব্য করেননি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন

গত ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং গত ১২ মে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘নিষিদ্ধ হচ্ছে না আঃলীগ- রাষ্ট্রপতি চুপ্পু। পল্টি নিলেন উপদেষ্টারা।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কোনো মন্তব্য করেননি বরং, ভিন্ন বিষয়ের পুরোনো কিছু ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই- ১ ও ২

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট ‘‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও এবং চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০২ নভেম্বর ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?: ফখরুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ভিডিওর কিছু দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর কয়েকটি ক্লিপের মিল রয়েছে।

এসব ভিডিওতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা এসব মন্তব্য করেন।

অর্থাৎ, এসব ভিডিও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির পূর্ব থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।

ভিডিও যাচাই- ৩

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘‘প্রধানমন্ত্রী চেয়ারে বসিয়ে বললেন সাইন করেন, এর আগে আচঁ করতে পারিনি’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর কিছু দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর প্রথম ক্লিপটির মিল রয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির শুরুর ১৪ সেকেন্ড অংশে সংবাদ উপস্থাপকের বক্তব্যের ক্লিপ ও ০১:১১ থেকে ০১:৩৪ সেকেন্ড পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যের ক্লিপের অংশগুলো আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।  

মূল ভিডিওর এই অংশে রাষ্ট্রপতি চুপ্পু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তার বিশেষ ক্ষমতাবলে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানান।

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির পূর্ব থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।

ভিডিও যাচাই- ৪

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যেন নির্বাচিত হয় : মো. সাহাবুদ্দিন’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর কিছু দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর চতুর্থ ক্লিপটির মিল রয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:৫৮ থেকে ০১:১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যের ক্লিপের অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।  

মূল ভিডিওর এই অংশে রাষ্ট্রপতি চুপ্পু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দলকে নির্বাচিত করবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, “লক্ষ্য রাখতে হবে, আমার সবচেয়ে বড় আকাঙ্খা, যেহেতু আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমার এই আকাঙ্খা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়। যে সরকার বা যাকে নির্বাচিত করুক অবশ্যই তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হয়।”

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির পূর্ব থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।

সুতরাং, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মিথ্যা৷

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img