সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার ছবি ও তার একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে “মেট্রোরেল বানিয়ে ঢাবির আকাশটাকে ঢেকে দিয়েছিল! তাই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি!” শীর্ষক শিরোনামে সংবাদমাধ্যম সমকালের নাম ও লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে। আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “হায়রে অভাগী নতুন প্রজন্ম কি অদ্ভুত বিবেচনা ? কি আজগুবি বিশ্লেষণ কি নিচক চিন্তা চেতনা । ঢাকা শহরে বসবাসকারী ২ কোটির উপর মানুষের যানযট চিন্তা না করে,সে নাকি আকাশ দেখতে পারছেনা। কি বিকৃত মানসিকতা। হে তোমরা সফল! আহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী! এই যদি হয় নেতার চিন্তা ভাবনা এবং আদর্শ তবে এই জাতির খবর আছে। তবে দোষ আমি শেখ হাসিনাকেই দেবো।এগুলো বানিয়ে জাতিকে এই পর্যায়ে আনার কোন দরকারই ছিলো না। এই জাতি এগুলোর যোগ্য ছিলো কি না এই গবাদিগুলাই উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের আজব আজব ক্ষোভ থেকে পুরো জাতির বারোটা বাজানোর দায় তোমাদের নিতেই হবে।যেই জাতি আলো দেখতে চায় না তাকে অন্ধকারে রাখাই শ্রেয়।” এছাড়াও, উমামা ফাতেমার সমালোচনা করা ক্যাপশনসহ আরো একাধিক ক্যাপশনে আলোচিত ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে সংযুক্ত উমামা ফাতেমার পোস্টের স্ক্রিনশটটিতে লেখা রয়েছে, “Once upon a time…. রাজুর উপর মেট্রোরেল ছিল না। শাহবাগ থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত রাস্তাটা বিচ্ছিরি পিলারগুলো দখল করে ছিল না। যেদিন থেকে চারুকলার সামনে প্রথম গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয় তখন চোখের সামনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু দেখেছিলাম। শেখ হাসিনার বিশেষ ক্ষোভ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। সাথে তাদের পা চাটা প্রশাসন। আমাদের আকাশটা তারা ঢেকে দিয়েছিল। আমরা একটা ইট-পাথরের ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে আছি।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

আলোচিত ফটোকার্ডটি সংযুক্ত করে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার ছবি সংযুক্ত করে “মেট্রোরেল বানিয়ে ঢাবির আকাশটাকে ঢেকে দিয়েছিল! তাই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি!” শীর্ষক শিরোনামে সমকাল কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সমকালের নাম ও লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে সমকালের নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সমকালের ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সমকালের ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, সমকালের ফেসবুক পেজে প্রচারিত প্রচলিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্ট ডিজাইনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম শেষে বিরামচিহ্ন হিসেবে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দেওয়া হয়েছে, যা সমকালের ফটোকার্ডে সাধারণত দেখা যায়না। প্রচারিত ফটোকার্ডটির সদৃশ সমকালের প্রচলিত ফটোকার্ডে তারিখের বামপাশে সাধারণত সমকালের নাম এবং ডানপাশে ওয়েবসাইটের ইউআরএল থাকে যা আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে অনুপস্থিত।
পরবর্তীতে উমামা ফাতেমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গত ০৮ এপ্রিলে ‘Mahabub Khalashi’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “কত কি যে সয়ে যেতে হয়!” শীর্ষক ক্যাপশনে রাজু ভাস্কর্যের ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রচার করা হয়, যা গত ০৯ এপ্রিলে উমামা ফাতেমা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেন, “Once upon a time…. রাজুর উপর মেট্রোরেল ছিল না। শাহবাগ থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত রাস্তাটা বিচ্ছিরি পিলারগুলো দখল করে ছিল না। যেদিন থেকে চারুকলার সামনে প্রথম গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয় তখন চোখের সামনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু দেখেছিলাম। শেখ হাসিনার বিশেষ ক্ষোভ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। সাথে তাদের পা চাটা প্রশাসন। আমাদের আকাশটা তারা ঢেকে দিয়েছিল। আমরা একটা ইট-পাথরের ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে আছি।” তবে, উক্ত ক্যাপশনে মেট্রোরেল বানিয়ে ঢাবির আকাশ ঢেকে দেওয়ায় শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি শীর্ষক কোনো মন্তব্য উমামাকে করতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার ছবি সংযুক্ত করে “মেট্রোরেল বানিয়ে ঢাবির আকাশটাকে ঢেকে দিয়েছিল! তাই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি!” শীর্ষক শিরোনামে সমকালের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Samakal – Facebook Page
- Samakal – Website
- Umama Fatema – Facebook Post
- Rumor Scanner’s analysis