সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাধীন ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে। আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর নাম। গত ৮ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরই প্রেক্ষিতে, সৈয়দ আবেদ আলী সম্পর্কে ‘ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ আপনারা রিমান্ডে নেয়ার কে?’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম সময় টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ আপনারা রিমান্ডে নেয়ার কে?’ শীর্ষক দাবিতে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম সময় টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে শিরোনাম পরিবর্তন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ফটোকার্ডটি সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি করা হয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা নেই।
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে সময় টিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ৯ জুলাই “প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকারের পর আবেদসহ ৭ আসামিও কারাগারে” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও আবেদ আলীর ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই ফটোকার্ডটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির তূলনামূলক বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে জুম বাংলার ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের ডিজাইনের মিল নেই। এছাড়া সময় টিভির ফটোকার্ডটিতে তারিখ এবং ছবির নিচে ফাইল ছবি লেখা থাকেও আলোচিত ফটোকার্ডে সেগুলো অনুপস্থিত।

আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে “প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকারের পর আবেদসহ ৭ আসামিও কারাগারে” বাক্যাংশের পরিবর্তে “ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ আপনারা রিমান্ডে নেয়ার কে?” বাক্যাংশটি যুক্ত করা হয়েছে।
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
একইদিনে সময় টিভির ওয়েবসাইটে “প্রশ্নফাঁস: আবেদ আলীসহ ৬ আসামির দায় স্বীকার” শিরোনামে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে করা মামলায় দায় দায় স্বীকারের পর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয় আসামি দায় স্বীকার করেছেন।
মূলত, গত ৯ জুলাই সময় টিভির ফেসবুক পেজে “প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকারের পর আবেদসহ ৭ আসামিও কারাগারে” শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পদনার মাধ্যমে শিরোনাম পরিবর্তন করে “ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ আপনারা রিমান্ডে নেয়ার কে?” শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে অভিযুক্ত সৈয়দ আবেদ আলীকে উদ্ধৃত করে ‘ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ আপনারা রিমান্ডে নেয়ার কে?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মন্তব্যটি বানোয়াট এবং উক্ত দাবিতে সময় টিভি’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- somoynews.tv Facebook page: প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকারের পর আবেদসহ ৭ আসামিও কারাগারে
- somoynews.tv website: প্রশ্নফাঁস: আবেদ আলীসহ ৬ আসামির দায় স্বীকার
- Rumor Scanner’s Own Analysis