প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের পিটিশনের নামে ফিশিং লিঙ্ক প্রচার

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট তারিখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর গত ০৮ আগস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।  এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পিটিশনের লিঙ্কসহ পোস্ট প্রচার করা হচ্ছে। পিটিশনটিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। 

উক্ত পিটিশনটিসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

দাবিকৃত পিটিশনটি দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে করা পিটিশনটি ভুয়া এবং লিঙ্কটি ক্ষতিকর। তাছাড়া, এটি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষতিও হতে পারে।

অনুসন্ধানের শুরুতে পিটিশনটিতে ক্লিক করলে এর নিচে Joseph Emmanuel, David Anthony, Amahle John এবং Bonolo নামের কয়েকজনের মন্তব্য দেখতে পাওয়া যায়। মন্তব্যগুলোর পাশে মন্তব্যগুলো করার পর অতিক্রান্ত সময় হিসেবে যথাক্রমে ১,২,১,৪ মিনিট উল্লেখ করতে দেখা যায়। উক্ত ওয়েবপেজটি লোড না করে কিংবা নতুন পেজে না গিয়ে উক্ত পেজটিতে থাকলে এই সময়গুলো স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন হয় বা বাড়ে। কিন্তু, নতুন করে ওয়েবপেজটিতে প্রবেশ করলে এটিতে পুরোনো সময় তথা ১,২,১,৪ মিনিট প্রদর্শন করে এবং সময়ের হিসেব নতুন করে শুরু হয় যা সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়। 

অতঃপর, দাবিকৃত পিটিশনটির ওয়েবসাইটটির (mpetition.org) বিষয়ে অনুসন্ধান করলে ভিন্ন আরেকটি পিটিশন দেখতে পাওয়া যায়৷ এবারের দাবিকৃত এই পিটিশনটিতে ঘানায় আটককৃত আন্দোলনকারী বা বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবি করা হয়। কিন্তু, দাবিকৃত এই পিটিশনটি লক্ষ্য করলে এর নিচেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে করা আগের পিটিশনটির মতো Joseph Emmanuel, David Anthony, Amahle John এবং Bonolo নামের হুবহু একই নামের কয়েকজনের হুবহু একই মন্তব্যগুলো পুনরায় দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি মন্তব্যগুলোর পাশে মন্তব্যগুলো করার পর অতিক্রান্ত সময় হিসেবেও আগেরটির মতো ধারাবাহিকভাবে যথাক্রমে ১,২,১,৪ মিনিট উল্লেখ করতে দেখা যায় এবং হুবহু একইভাবে এই সময়গুলো পরিবর্তন হয়। 

Comparison : Rumor Scanner

গুগলের অধীনস্থ ইন্টারনেট সিকিউরিটি, ফাইল, ইউআরএল বিশ্লেষক টুল ভাইরাস টোটালে দেখা যায়, দাবিকৃত পিটিশন লিংকটিকে ৭ টি প্রতিষ্ঠান ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকারক লিঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাশাপাশি ভিপিএন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নর্ড ভিপিএন এর ওয়েবসাইটে দাবিকৃত পিটিশনটির লিঙ্ক স্ক্যান করলে দেখা যায়, লিঙ্কটিকে ক্ষতিকারক সাইট হিসেবে চিহ্নিত করে জানিয়েছে, এটি ভাইরাস, স্পাইওয়্যার সহ নানা ম্যালওয়্যার ডিভাইসে সংক্রমিত করে ক্ষতি করতে পারে। একই তথ্য জানা যায়, ইউআরএল স্ক্যানের ওয়েবসাইট থেকেও। 

তাছাড়া, দাবিকৃত পিটিশনটির উক্ত সাইটটির হোম পেজ ভিজিট করা যায়নি এবং উক্ত সাইটটির স্বচ্ছতা, উদ্দেশ্য কিংবা আনুষঙ্গিক কোনো প্রয়োজনীয় বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্যই পাওয়া যায়নি। অধিকন্তু, উক্ত ওয়েবসাইটটিতে ফ্রি ১০ জিবি এবং ২০ জিবি ডাটা বিতরণের মতো ভুয়া ক্যাম্পেইন প্রচার হতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, দাবিকৃত পিটিশনটির ওয়েবপেজের নিচের অংশে চেঞ্জ ডট ওআরজি নামের জনপ্রিয় এবং বৃহৎ একটি পিটিশন প্ল্যাটফর্মের ইন্টারফেস দেখা যায় কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখে আসল চেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির থেকে আলোচিত পিটিশনটির ওয়েবসাইটটি আলাদা। তাছাড়া, আসল চেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির ইউআরএল change.org হলেও আলোচিত ওয়েবসাইটটির ইউআরএল mpetition.org।

সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবিতে প্রচারিত পিটিশন লিঙ্কটি ভুয়া এবং প্রতারণামূলক। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img