ড. ইউনূসের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে বানোয়াট ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘ফেব্রুয়ারিতে ড. ইউনুস পদত্যাগে বাধ্য. ড.ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা! ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশের জনগণ হয়তো চায় না আমি আর ক্ষমতায় থাকি!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি বরং কতিপয় ভিন্ন বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সংযুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচারিত  ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত ফুটেজগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটি যাচাইয়ের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ মে ‘প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে আমাকে সরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির আংশিক মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সে বছরের মে মাসে যুক্তরাজ্য সফরে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র তাকে আর বাংলাদেশের ক্ষমতায় না চাওয়ার বিষয়ে তার ধারণা প্রকাশ করে৷ উক্ত ভিডিওর এই অংশে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার নামের স্থলে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস’ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে৷  

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটি যাচাই করার মাধ্যমে Toronto Star নামে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ০১ ডিসেম্বর ‘Trump wishes ‘Merry Christmas’ at White House tree lighting’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে ট্রাম্পের বক্তব্যের একটি ফুটেজের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি সে বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানানোর ভিডিও।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ভিডিও যাচাই-৩

আলোচিত ভিডিওটি যাচাই করার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পোস্ট করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ট্রাম্পের বক্তব্যের একটি ফুটেজের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি NYYRC (New York Young Republican Club) নামক সংগঠনের ১১২তম বাৎসরিক গালা আয়োজনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানোর ভিডিও।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূসকে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ড. ইউনূস আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো বক্তব্য দেননি।

সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার ভিডিওতে সম্পাদনার মাধ্যমে ড. ইউনূসের নাম যুক্ত করে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া কয়েকটি ভিন্ন  বিষয়ের বক্তব্য যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img