গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
৩১ অক্টোবর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে একটি পোস্ট করেন ট্রাম্প। এই পোস্ট এবং ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বিদেশি প্রভাবের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা একটি প্রতিবেদনে দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনা চলাকালে ৬ নভেম্বর সকালে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ছেড়ে ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন। এই দাবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এবং কিছু পোস্টে তার বিমানে বসার একটি ছবি ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়েছেন দাবিতে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক বাংলার প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
বিমানের সিটে বসে থাকার ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়েছেন বলে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তিনি এখনো বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। এছাড়া তার পালানোর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা বিমানের ছবিটি গত ৮ আগস্ট তার ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরার সময়ের।
রিপাবলিক বাংলার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ড. ইউনূস ৬ নভেম্বর সকালে ফ্রান্সে তার মেয়ের কাছে গেছেন। তবে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
৬ নভেম্বর তার দিনের কর্মসূচি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
একই দিনে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেসের সাথেও তার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সূত্রে, রিউমর স্ক্যানার টিম এসব সাক্ষাতের মূল ছবি সংগ্রহ করেছে এবং মেটাডাটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে, ছবিগুলো ৬ নভেম্বর সকাল ১১:৪৮ থেকে দুপুর ১২:২৩-এর মধ্যে ধারণ করা হয়েছে।
জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেনও ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় জেএসডি সভাপতি জাতীয় বীর আ স ম আবদুর রবও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
অর্থাৎ, রিপাবলিক বাংলার প্রতিবেদনে ড. ইউনূস ৬ নভেম্বর সকালে ফ্রান্সে পালানোর দাবি করা হলেও, সারাদিন ধরে তার বাংলাদেশে উপস্থিতি এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়া, আজ ৭ নভেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনারে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন তিনি।
ফ্রান্সে পালানোর প্রমাণ হিসেবে প্রচারিত বিমানে বসা ছবিটির বিষয়েও অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি গত ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে তার দেশে ফেরার সময়ের।
সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার দাবিটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Chief Adviser of the Government of Bangladesh – X post
- Chief Adviser of the Government of Bangladesh – X post
- Image metadata analysis.
- Prothom Alo – প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই
- Farhan Habib – Facebook Post
- Channel 24 – আমরা বিশ্বের কাছে যাব না, বিশ্ব যেন আমাদের কাছে আসে: প্রধান উপদেষ্টা
- Il Sole 24 Ore – Bangladesh, l’arrivo del Premio Nobel per la Pace Muhammad Yunus