ড. ইউনূসের প্রশংসা দাবিতে ট্রাম্পের বক্তব্যটি এআই দিয়ে বানানো

সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত ভিডিওটির দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্প বলেছেন, “ড. ইউনূস একজন মহান ব্যক্তিত্ব এবং তিনি আমার বন্ধু। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং তিনি খুব ভালো করছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে ড. ইউনূস বড় ভূমিকা রাখবেন।”

ট্রাম্পের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে

একই বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. ইউনূসের প্রশংসা দাবিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ৩০ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক মন্ত্রিসভা বৈঠকের ভিডিও ফুটেজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে নকল অডিও যুক্ত করে ট্রাম্পের নামে ভুয়া বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, ফক্স নিউজের ফেসবুক পেজে গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির উল্লেখযোগ্য মিল দেখা যায়। উভয় ভিডিওর তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাম্পের বক্তব্য ছাড়া বাকি সব উপাদান যেমন দৃশ্যপট, পরিবেশ এবং অংশগ্রহণকারীদের অবস্থান দুই ভিডিওতেই প্রায় অভিন্ন।

Comparison: Rumor Scanner. 

একই দিন ফক্স নিউজের এক্স অ্যাকাউন্টেও ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

পরবর্তী অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত ভিডিওটি মূলত গত ৩০ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি মন্ত্রিসভা বৈঠকের। ‘রোল কল’ নামের একটি ওয়েবসাইটে সেই বৈঠকের সম্পূর্ণ ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়া যায়। তবে, সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কোনো প্রশংসাসূচক মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ভিডিওতে ট্রাম্পের বক্তব্যেও একটি স্পষ্ট অসঙ্গতি দেখা যায়। ভিডিওটির ০.০২ সেকেন্ডে তাকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘meet’ শব্দটি উচ্চারণ করতে শোনা যায়। এমন অপ্রাসঙ্গিক শব্দের ব্যবহার ডিপফেক বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট নকল অডিওর একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ভিডিওটি একাধিক এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্মে যাচাই করা হয়। ‘হাইভ মোডারেশন’ প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়, ভিডিওটি আসল হলেও এর অডিও এআই ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ। একইভাবে ‘ডিপফেক-ও-মিটার‘ নামের আরেকটি টুলে বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে অডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কিছু মডেলে এটি এআই-নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত দেখিয়েছে।

Screenshot: Hive Moderation.
Screenshot: Deepfake-O-Meter.

সুতরাং, ট্রাম্পের ভিন্ন বক্তব্যের ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে নকল অডিও যুক্ত করে ট্রাম্প ড. ইউনূসের প্রশংসা করেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img