সম্প্রতি “এখন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকি করবে ডিসি-ইউএনও, থাকবে না কোন পরিচালনা কমিটি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনওরা থাকলেও স্কুল পরিচালনায় কোনো কমিটি না থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং এ ধরনের কোনো নির্দেশনা সরকার থেকে দেওয়া হয়নি।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৮ জুলাই দেওয়া “জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তদারকি/পরিদর্শন কার্যক্রম গ্রহণ।” শীর্ষক বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (সমন্বয়) নাসরীন সুলতানা স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রোস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষ প্রতিষ্ঠানসমূহ তদারকি/পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। তৎপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের তদারকি/পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। বিজ্ঞপ্তিটির কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি থাকবে না এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এছাড়া অনলাইন গণমাধ্যম Bartabazar.com এ ২ আগস্ট “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদারকির দায়িত্বে ডিসি ও ইউএনও” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজগুলোতে পরিদর্শন ও তদারকি জোরদার করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে দেশের সাড়ে পাঁচশতাধিক ডিসি এবং ইউএনও ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও তদারকির দায়িত্ব পেলেন।
বর্তমানে সরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসার প্রধান পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকেরা রয়েছেন বলে প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়।
এই প্রতিবেদনটিরও কোথাও স্কুল পরিচালনা কমিটি না থাকা নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (সমন্বয়) নাসরীন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “কমিটি যদি না থাকতো, সেটা তো সরকার থেকেই জানানো হতো তাই না? কমিটি যদি না থাকতো, সেটা তো লেখা থাকতো। এমন কিছু তো লেখা নেই। যেটা আমরা নির্দেশনা দেই নি, সেটা কেন ছড়াবে আমরা বুঝলাম না।”
অর্থাৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনওরা থাকলেও স্কুল পরিচালনায় কোনো কমিটি না থাকার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, ২০২২ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি ও পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৮ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিটির কোথাও স্কুল পরিচালনায় কোনো কমিটি না থাকার বিষয়ে উল্লেখ করা না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকি ও পরিদর্শন কার্যক্রম গ্রহণে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে দেওয়া নির্দেশনার সঙ্গে এটিকে যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধনকালে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের ২৪টি নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে একটি নির্দেশনা ছিল, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।”
সুতরাং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনওরা থাকলেও স্কুল পরিচালনায় কোনো কমিটি না থাকার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
bartabazar.com: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদারকির দায়িত্বে ডিসি ও ইউএনও
Daily Jugantar: ডিসিদের ২৪ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর