ইরানের হামলায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যার জবাবে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এরই প্রেক্ষিতে, ইরান সফলভাবে ইসরায়েলের ৩০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরান সফলভাবে ইসরায়েলের ৩০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কোনো ঘটনার নয়। বরং, ভিডিওটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে গাজার রাফাহ শহরের শাবোরা ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলার পরের দৃশ্য। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে ভিডিওটিতে ‘hani.alshaer’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এই সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘hani.alshaer’ নামক এক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে হুবহু ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি গাজার রাফাহ শহরের শাবোরা ক্যাম্পের।

Comparison: Rumor Scanner

‘hani.alshaer’ নামক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি আল জাজিরার প্যালেস্টেইন ভিত্তিক সাংবাদিক। অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ইসরায়েলে ইরানের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলজাজিরার আরবি সংবাদ পোর্টাল ‘aljazeera.net’- এ গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে হানি আলশায়েরকে সরজমিনে রিপোর্টিং করতে দেখা যায়। এছাড়াও, প্রতিবেদনের কয়েকটি দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও স্থানের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ভিডিও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফাহ শহরের শাবোরা শিবিরকে লক্ষ্য করে ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় অনেকেই আহত ও নিহত হয়েছে।

এছাড়াও, গত ১২ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘Anadolu Agency’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘Palestinian mayor warns of humanitarian disaster in Rafah on eve of possible Israeli onslaught’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর স্থানের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ৩০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল কি না তা যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে উভমুখী দাবি পাওয়া যায়। কিছু সূত্রের ভিত্তিতে ইরানের গণমাধ্যম তেহরান টাইমস প্রচার করে ২০টিরও অধিক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ জানিয়েছেন, মিলিটারি অপারেশনটি ৯০ শতাংশেরও বেশি সফল হয়েছে। 

অপরদিকে, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (IDF) এর বরাতে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করলেও কোনো বড় রকমের ক্ষতি করতে পারেনি। ইসরায়েলের বিমানঘাঁটিতে হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে তারা ‘অফলপ্রসূ’ হিসেবেই গণ্য করছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের মিলিটারি জানায়, ইরানের হামলায় যুদ্ধবিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি। 

এদিকে ইরানের হামলা পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের ক্ষতিগ্রস্ত বিমানঘাঁটির ছবি দাবিতে স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত কিছু ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। এমন ছবির ব্যাপারে ইসরায়েলের মিলিটারি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের কিছু বিমানঘাঁটি ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

সুতরাং, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গাজার রাফাহ শহরের শাবোরা ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলার পরের দৃশ্যকে সম্প্রতি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসুত্র


আরও পড়ুন

spot_img