গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ঐ স্থান থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয় এবং আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন৷
এরই প্রেক্ষিতে, আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ৮ জন নিহত এবং ৭০ জনের ওপরে আহত হয়েছেন- শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া, উক্ত ঘটনায় ১ জন, ৪ জন, ৮জন, ৯ জন, ১০ জন, ১৫ জন এমনকি ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন বলেও ভিন্ন ভিন্ন দাবি প্রচার করা হয়েছে।
৮ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
১ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
৪ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
৯ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
১০ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
১৫ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
১৭৩ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান করা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হলেও কেউ নিহত হন বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে “যমুনা ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা, কাল পর্যালোচনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পরে সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন। যমুনার সামনে পুলিশ সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে তাঁদের আটকে দেয়। তখন আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এরপরও আন্দোলনকারীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে থাকেন। তাঁরা রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
একই ঘটনায় যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ০১ অক্টোবর “শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ টিয়ারশেল বহু আহত তীব্র যানজট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা জাদুঘরের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে অবস্থান নিতে যান। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন।
অর্থাৎ, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও নিহতের কোনো তথ্য গণমাধ্যম বা কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে চাকরির বয়স ৩৫ আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ১, ৪, ৮, ৯, ১০, ১৫ এমনকি ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যগুলোসম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo- যমুনা ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা, কাল পর্যালোচনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা
- Jugantor- শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ টিয়ারশেল বহু আহত তীব্র যানজট
- Rumor Scanner’s Own Analysis