গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে বিড়ালের কান্নার এই ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত গাজা উপত্যকায় বাস করা সাধারণ মানুষের জীবনে প্রবল প্রভাব ফেলেছে। এই অব্যাহত সংঘাতের কারণে, অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে, এবং অসংখ্য লোক হতাহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “গাজায় পশুদের এই অবস্থা হলে মানুষের কি অবস্থা?” শীর্ষক শিরোনামে দুটি ছবির কোলাজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিগুলোতে, ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি বড় বিড়াল একটি ছোট বিড়ালকে আলিঙ্গন করে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে বিড়ালের কান্নার আলোচ্য ছবিগুলো বাস্তব নয় বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবিকে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে বিড়ালের পায়ের আঙুল ও মুখের গঠনে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ ধরনের অস্বাভাবিকতা সাধারণত এআই টুল দিয়ে তৈরি ছবিতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ছবিগুলোসহ একই ধরণের আরও কয়েকটি ভিন্ন ছবি দিয়ে তৈরি একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকে খুঁজে পাওয়া যায় (,,)।

ভিডিওগুলোর এক কোণে থাকা জলছাপের সূত্রে Maria Bartin নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই ছবিগুলো পাওয়া যায়নি। কিন্তু এআই দিয়ে তৈরি বিড়ালের অন্য কিছু ছবি এই ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টিতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে আলোচ্য ছবিগুলো নিয়ে আরবি ভাষায় প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। রয়টার্সকে মারিয়া বার্টিন জানান, তিনি Bing AI এর মাধ্যমে এই ছবিগুলো তৈরি করেছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে মারিয়া বার্টিনের করা মূল পোস্টের আর্কাইভও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Internet Archive.

এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, বিড়াল মানুষের মতো আবেগের বশে কাঁদে না। তারা চোখের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অশ্রু উৎপাদন করে। বিড়ালের আবেগ প্রকাশ পায় তাদের ডাক, শারীরিক ভাষা এবং আচরণের মাধ্যমে। 

তাছাড়া ‘AI or Not’ এবং ‘Hive Moderation’ নামের দুটি এআই শনাক্তকারী ওয়েবসাইটে উক্ত ছবিগুলো যাচাই করে দেখা যায় এগুলো এআইয়ের সাহায্যে তৈরি।

মূলত, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে সংঘাত চলমান রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে বিড়ালের কান্নার দৃশ্য দাবিতে দুটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায় ছড়িয়ে পড়া এই ছবিগুলো এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি। মারিয়া বার্টিন নামের একজন ব্যক্তি Bing AI এর সাহায্যে এই ছবিগুলো তৈরি করেছেন।

প্রসঙ্গত, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের চলমান সংঘাত ঘিরে এআই এর সাহায্যে তৈরি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবির সত্যতা যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দেখুন –

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে বিড়ালের কান্নার বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img