গাজায় বৃষ্টির কাঁদা পানিতে দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার এই ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

গত বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হয়, যা এখনো চলছে। গত ২৬ জানুয়ারি ভারী বর্ষণের ফলে গাজায় হাজার হাজার আশ্রয় শিবির ডুবে যায়। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুইজন শিশু বৃষ্টির কাঁদা পানিতে ঘুমাচ্ছে।

এই ছবি পোস্ট করে অনেকেই দাবি করেছেন, ছবিটা কোনো শিল্পীর আঁকা নয়। এই তীব্র শীতে আমাদের দুনিয়ারই আরেক প্রান্তে থাকা আরেক নগরী গাজার ছবি এটি।

কাঁদা

এ সংক্রান্ত কেবল একটি ফেসবুক পোস্টেই (আর্কাইভ) ২ লক্ষ ৫৪ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ১০ হাজারেরও অধিক মন্তব্য পাওয়া এই পোস্টটি ২৯ হাজারেরও অধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃষ্টির কাঁদা পানিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবিটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচ্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইন্সটাগ্রাম, এক্স এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (,,) একই ছবি প্রচার হতে দেখা যায়। প্রচারিত ছবিগুলোতে একটি সাধারণ বিষয় নজরে পড়ে। অধিকাংশ পোস্টে যুক্ত ছবির ডান সাইডের কোণায় একটি টিকটক ইউজারনেম (@ufxyucxuucyd) রয়েছে।

Image analysis: Rumor Scanner

উক্ত সূত্র ধরে টিকটকে অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে এই ইউজারনেমে কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট নেই।

আলোচ্য ছবিটি বিশ্লেষণ করি আমরা। আমাদের বিশ্লেষণে ছবিটির কিছু অসংগতি সামনে আসে। যেমন, হাতের ও পায়ের আঙ্গুলের ঘটন, নাক ও কানের অস্বাভাবিকতা। এআই টুল দিয়ে তৈরি ছবিতে সাধারণত এ ধরনের অসংগতি দেখা যায়।

Image analysis: Rumor Scanner

পরবর্তীতে ‘AI or Not’ এবং ‘Hive Moderation’ নামের দুটি এআই শনাক্তকারী ওয়েবসাইটে ছবিটি যাচাই করে দেখেছি আমরা। দুটি ওয়েবসাইটই জানাচ্ছে, ছবিটি এআইয়ের সাহায্যে তৈরি।

Screenshot: AI or Not & Hive Moderation.

আলোচ্য ছবির বিষয়ে জানতে ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতার কাছে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, ‘অবশ্যই এআই দিয়েই তৈরি এটা। আমি বুঝি না মানুষ কেন এই ধরনের এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করছে।’

তাছাড়া বৃষ্টিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার এআই দিয়ে তৈরি ভিন্ন একটি ছবি পূর্বেই যাচাই করেছি আমরা।

জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেও আলোচ্য ছবিটি সহ মোট তিনটি ছবি যাচাই করে দেখেছে ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি।

মূলত, গত বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি গাজায় ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুজন শিশু কাঁদা পানিতে ঘুমাচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি। ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে গাজায় বৃষ্টিতে দুই শিশুর একটি তাঁবুর সামনের কাঁদা পানিতে ঘুমিয়ে থাকার বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img