বৃষ্টিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার এই ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত যা এখনও চলছে। গত ২৬ জানুয়ারি গাজায় ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে শেয়ার করছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুইজন শিশু একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে আছে। 

এই ছবি পোস্ট করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ছবিটা কোনো শিল্পীর আকাঁ নয়। এই তীব্র শীতে আমাদের দুনিয়ারই আরেক প্রান্তে থাকা আরেক নগরী গাজার ছবি এটি।

দুই শিশুর

কিছু পোস্টের ক্যাপশনে এই ছবিটির বিষয়ে লেখা রয়েছে, “গাজায় এই কনকনে শীতে মুষলধারে বৃষ্টি জড়োসড়ো হয়ে পিতামাতা হারা এতিম মাসুম দুই শিশু কি অবস্থায় ঘুমাচ্ছে।”

উক্ত ছবিকে বাস্তব দাবি করে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃষ্টিতে গাজায় দুই শিশুর ঘুমিয়ে থাকার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবিটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আল মাশরির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

জনাব মাশরি তার পোস্টে বৃষ্টিতে গাজার শিশুদের মানবেতর জীবনযাপনের একাধিক ছবির সাথে আলোচিত ছবিটিও শেয়ার করেছেন। 

ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “আমার সাথে কল্পনা করুন, আপনি মানুষ! কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার নিজের। কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার ভাইবোন। আমার সাথে কল্পনা করুন যে এই শিশুরা আপনার আত্মীয়। গাজায় বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে প্রতি সেকেন্ডে হাজার বার মারা যায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধ! পানি ছাড়া, খাবার ছাড়া, আচ্ছাদন ছাড়া, কাপড় ছাড়া, তাঁবু ছাড়া তারা মাটিতে পড়ে থাকে! আপনি কি এমন কিছু কল্পনা করতে পারেন!” (ভাবানুবাদ)।

Screenshot: Instagram 

মাশরির পোস্টের ক্যাপশন থেকে ছবিটি বাস্তব বা এআই দিয়ে তৈরি কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। তবে তার এই ছবি প্রকাশের পরই সেটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর এই ছবিটি তিনি তার পোস্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। 

আমরা ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে বেশকিছু অসঙ্গতি পেয়েছি। যেমন, হাতের আঙ্গুলের সংখ্যা, নাক ও কানের অস্বাভাবিকতা এআই টুল দিয়ে তৈরি ছবির সাথে মিলে যায়। 

Image analysis: Rumor Scanner 

ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফও (Kashif) একই পর্যবেক্ষণের কথা জানাচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটি এআই দিয়ে তৈরি। তবে কে তৈরি করেছে তা বের করা যায়নি। মূলত একজন ফটোগ্রাফার তাঁবুতে বাচ্চাদের জন্য সত্যিকারের ছবি প্রকাশ করার পরে এটির প্রচার পেতে শুরু করে। 

কাশিফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আল মাশরির সাথে তারা কথা বলেছেন। মাশরি তাদের জানিয়েছেন, এই ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি গাজায় ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। এর প্রেক্ষিতে একটি ছবি নেটিজেনরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও পেজে শেয়ার করছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে দুইজন শিশু একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে,

এই ছবিটি বাস্তব নয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি। ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি। 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে গাজায় দুইজন শিশুর একটি তাঁবুর সামনের কর্দমাক্ত স্থানে ঘুমিয়ে থাকার বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img