জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করে। গত ৫ আগস্ট সেই আয়োজনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভের মুখে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে থাকা একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাতে বামপন্থী সংগঠন ও শিবিরের সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিয়েছে বলেও জানা যায়।
তবে এরই মধ্যে ‘সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ছাত্রীদের উপর শিবিরের হামলা।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর শিবিরের হামলা নয়। বরং, এটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ভিডিও।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা বাংলানিউজ২৪.কম -এর লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ২৭ জানুয়ারি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সং-ঘর্ষ’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনার বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী সন্ধ্যা থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। তাঁরা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে নীলক্ষেত মোড় থেকে কিছুটা সরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা আবার একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পাল্টাপাল্টি এই ধাওয়ার মধ্যে রাত ১২টার পর পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
অর্থাৎ, প্রচারিত সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিরও কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর শিবিরের হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- banglanews24.com : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সং-ঘর্ষ
- Prothom Alo : মধ্যরাতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৫
- Desh TV News : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ
- Samakal : কোন কারণে ঢাবি ও সাত কলেজ সংঘর্ষ