সমন্বয়ক এমদাদ এই ভিডিওতে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের আলটিমেটাম দেননি

সম্প্রতি, ‘এক সাপ্তাহের মধ্যে হিন্দুদের দেশত্যাগ করে চলে যাবার হুমকি। স্বাধীনতা ২০২৪’ শীর্ষক দাবিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারানো সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ নামে চট্টগ্রামের একজন সমন্বয়কের একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সমন্বয়ক এমদাদ এই ভিডিওতে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের আলটিমেটাম দেননি বরং, এমদাদের এক সপ্তাহের আলটিমেটাম সংক্রান্ত বক্তব্যটি তিনি আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো মানুষদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন। এর সাথে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশ ছাড়ার হুমকির কোনো সম্পর্ক নেই।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ তার বক্তব্যে  বলেন, “সাবধান হয়ে যাও, এক সপ্তাহ তোমাদেরকে আলটিমেটাম দিয়ে দিলাম। এক সপ্তাহের আলটিমেটাম, তারপর তোমাদেরকে দেখে নিব। কখনো হিন্দু নামে, কখনো সংখ্যালঘু নামে, কখনো চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব হয়ে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের তারা কি বলেন নেতা, লিডার বলেন, তথাকথিত সাংবাদিক বলেন, তাদেরকেও হুশিয়ার করে দিতে চাই। তোমরা তালবাহানা করবা না! তেল গুটিয়ে দেশ থেকে ভাগো। অতি সত্বর ভেগে যাও। তোমার বাবারা ভেগে গেছে, তোমার দাদারা ভেগে গেছে, শেখ হাসিনা ভেগে গেছে। তোমরা ফাতরামি, ফাজলামি করিও না, নটরফটর করিও না। সাবধান করে দিতেছি। সাবধান হয়ে যাও। এক সপ্তাহ তোমাদেরকে আলটিমেটাম দিয়ে দিলাম। এক সপ্তাহের আলটিমেটাম, তারপর তোমাদেরকে দেখে নিব। যতক্ষণ বেঁচে আছি, তারপরে তোমাদেরকে দেখে নিব।”

অনুসন্ধানে ২৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আপলোড করা একটি ভিডিওতে এমদাদের পুরো বক্তব্য পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের সিআরবিতে বিকিরণ চট্টগ্রাম মহানগর কর্তৃক আয়োজিত জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের এই বক্তব্য দেন। 

সাত মিনিটের বক্তব্যটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বক্তা এমদাদ ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্যটি দিয়েছেন। যার আগে এবং পরের কিছু অংশ কেটে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। পুরো বক্তব্য পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট হয় যে, আলটিমেটাম সংক্রান্ত তার বক্তব্যটি হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়নি। তিনি মূলত কথাগুলো বলেছিলেন আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে।  

সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আমার বক্তব্যে যারা ভুল ব্যাখ্যা করে মৌমাছির মত হুল ফোটানোর চেষ্টা করছেন তাদেরকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারি বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।  ভালো করে শুনুন আমার বক্তব্যটি। আমি বলেছি যারা ষড়যন্ত্র করছেন, তালবাহানা করছেন বা লটর বটর করছেন তারা হুশিয়ার হয়ে যান নতুবা শেখ হাসিনার মত দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আপনাদের পূর্বপুরুষেরাও ষড়যন্ত্র করে এই দেশে টিকতে না পেরে পালিয়ে গেছে যেরকম পালিয়ে গেছে আপনাদের নেত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনা। এখন সচেতন এবং দেশ প্রেমিক নাগরিকরাই বলুক, আমার জন্মভূমির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু, সাংবাদিক বা বিভিন্ন পেশাজীবীদের ব্যানারে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখবে আর আমি তাদেরকে তৈলমর্দন করে বক্তব্য দেবো, তাদের সার্কাস দেখব, তাদের ভেলকিবাজি দেখব, এজন্যে কি ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ নিয়ে নিজের চোখকে শহীদ করেছি? প্রশ্ন রেখে গেলাম। দয়া করে কোন লঘু বা গুরুর ব্যানারে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবেন না ষড়যন্ত্রের অংশীদার হবেন না। ইনশাল্লাহ সফল হবেন না। আবারো মনে রাখবেন এই দেশে কেউ সংখ্যাগুরু নয় অথবা সংখ্যালঘু নয় বরং আমরা সাম্যের ভিত্তিতে সবাই বাংলাদেশী।

সুতরাং, সমন্বয়ক এমদাদের ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেওয়া একটি বক্তব্যকে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

  • Md Junaid Abdullah- Facebook Post 
  • Saifuddin Mohammad Amdad- Statement 
  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

আরও পড়ুন

spot_img