আইসল্যান্ডে প্রতিবছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশের দাবিটি গুজব 

দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকজন ব্যক্তির ছবিযুক্ত টয়লেটে এক ব্যক্তির মূত্রত্যাগের একটি ছবি কিছু তথ্য জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেদাবি করা হচ্ছে, আইসল্যান্ডে প্রতিবছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী এক বছরের জন্য দুর্নীতিবাজদের ছবি সারা দেশের টয়লেটগুলোর ইউরিনাল কমোডে এভাবেই রাখা হয়। যাতে করে জনগণ তাদের মুখে প্রস্রাব করে ঘৃণা জানাতে পারেন।

দুর্নীতিবাজদের তালিকা

সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইসল্যান্ডে প্রতিবছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করার দাবিটি সঠিক নয় এবং পরবর্তী এক বছরের জন্য দুর্নীতিবাজদের ছবি সারা দেশের টয়লেটগুলোর ইউরিনাল কমোডে টানিয়ে দেওয়ার দাবিটিও মিথ্যা বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন ঘটনার ছবি যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে। আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Getty Images

ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি ২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল বার্তা সংস্থা এএফপির ফটোগ্রাফার অলিভিয়ার মরিন আইসল্যান্ডের সেন্ট্রাল রিকজাভিকের সোদোমা বারের টয়লেট থেকে তুলেছেন।

ক্যাপশন থেকে আরও জানা যায়, টয়লেটটিতে ওই সব প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তাদের ছবি লাগানো হয়েছিল, যারা আইসল্যান্ডে ২০০৮ সালে আর্থিক বিপর্যয়ের পরে পালিয়ে যায়। ওই সময় দেশটির অর্থনৈতিক পতনের সাত মাস পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম Bloomberg ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ “This Is Where Bad Bankers Go to Prison” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইসল্যান্ডই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের পর দেশটির শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠিয়েছিল।

অর্থাৎ, ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির কারণে ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়ে ইউরোপের দ্বীপ রাষ্ট্র আইসল্যান্ড। বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ করে। ফলে ওই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হয় এবং অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই সময় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেশটির রাজধানীর একটি বারের টয়লেটে আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তার ছবি লাগিয়ে দেওয়া হয়। 

মূলত, আইসল্যান্ডে প্রতিবছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তী এক বছরের জন্য দুর্নীতিবাজদের ছবি সারা দেশের টয়লেটগুলোর ইউরিনাল কমোডে টানিয়ে দেওয়া হয়- শীর্ষক দাবিতে কয়েকজন ব্যক্তির ছবিযুক্ত টয়লেটে এক ব্যক্তির মূত্রত্যাগের একটি ছবি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আইসল্যান্ড রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করে না এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ২০০৯ সালে ব্যাংক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচিত দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, আইসল্যান্ডে প্রতিবছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তী এক বছরের জন্য দুর্নীতিবাজদের ছবি সারা দেশের টয়লেটগুলোর ইউরিনাল কমোডে টানিয়ে দেওয়া হয়- শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img