১৯৮৮ সালের বন্যায় বনানীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়নি 

সম্প্রতি, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকার বনানীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ পাওয়া গিয়েছিল শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং  এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকায় জাল ফেলে ইলিশ মাছ পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবির ব্যক্তি সেসময় বনানীতে জাল দিয়ে মাছ ধরলেও সেগুলো ইলিশ মাছ ছিল না। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পোস্টের ক্যাপশনেই ছবিটি তুহিন আহমেদ নামের একজন ব্যক্তির তোলা বলে দাবি করা হচ্ছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র নামের একটি পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে গত ২৯ এপ্রিল Tuhin Ahmed নামের এক ব্যক্তির করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটির সাথে সংযুক্ত একাধিক ছবির মাঝে আলোচিত ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে তুহিন আহমেদ লিখেন ‘গ্রুপের প্রিয় সদস্যগণ, আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বেশ কিছুদিন ধরে ‘পৃথিবীর দুষ্প্রাপ্য ছবি সমূহ / яαяє ριϲτυяєѕ οƒ τнє ωοяℓ∂’ নামক একটি ভুয়া গ্রুপ আমাদের এই “বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র” গ্রুপের বিভিন্ন ছবি কপি করে তা তাদের নামে ভুল তথ্যসহ প্রচার করছে। তেমনি সম্প্রতি আমার নিজ হাতে তোলা ১৯৮৮ সালের বন্যার একটি ছবি যা আমি এই গ্রুপের Back Up গ্রুপে কিছুদিন আগে পোস্ট করেছিলাম। ছবির ক্যাপশনে ইলিশ মাছের কোন কথা বলি নাই। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই গ্রুপটি কয়েকদিন পূর্বে আমার ছবির ফটো ক্রেডিটে আমার নাম না দিয়ে তাদের ভুয়া গ্রুপের নাম বসিয়ে ইলিশ মাছের ভুয়া সংবাদ দিয়ে পোস্ট করে! পোস্টদাতাকে পোস্ট সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করলেও ছবিটি সরিয়ে ফেলে নাই। বরং আমাকে গ্রুপ থেকে ব্লক করেছে। তাই ছবিগুলি আমি আবার সবার দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য গ্রুপে পুনরায় পোস্ট করলাম। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে এধরনের কার্যকলাপকে সামাজিক দুষ্কৃতিকারী হিসাবে চিহ্নিত করতে এবং এদের প্রতিহত করতে সকল সদস্যদের সহযোগিতা আশা করছি।

উল্লেখ্য Back Up গ্রুপে ছবির ক্যাপশন ছিল “কিছুদিন আগে ১ নং ছবিটি পোস্ট করার পর অনেক আলোচনা হয়েছিল। ছবিটি ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় বিমান বন্দর সড়কের বনানী ঢাকা গেইট এর ২৭ নং সড়কের সংযোগ স্থানে তোলা। এবার সাথে আরও তিনটি ছবি পোস্ট করলাম। ছবি তিনটি ঢাকা গেইট এর দিক থেকে উত্তর দিক অর্থাৎ বিমান বন্দরমুখি ছবি। এখানে এই রাস্তার নিচদিয়ে তিন লেনের একটি বিশাল বক্স কালভার্ট ছিল। এই কালভার্ট দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পানি এসে বনানী হয়ে গুলশান লেক দিয়ে হাতিরঝিল যেত। ছবি আমার নিজের তোলা”।’ 

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি উক্ত তুহিন আহমেদ নামের ব্যক্তির-ই তোলা। এছাড়াও তিনি তার পূর্বের কোনো পোস্টেই ছবির মাছগুলোকে ইলিশ বলে দাবি করেননি। 

পরবর্তীতে ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তুহিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘জাল দিয়ে মাছ ধরা ওই ব্যক্তির হাতে ইলিশ মাছ নয় বরং বিভিন্ন জাতের কিছু দেশী মাছ ছিল। মূলত, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় আমি বনানীর ১৮ নং রোডে থাকতাম। সেসময় বন্যা দেখতে বানানী ২৭ নং রোড এবং এয়ারপোর্ট রোডের সংযোগস্থলে গেলে একজন ব্যক্তিকে জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখি। তখন ওই ব্যক্তির সাথে আমার বড় ভাই, বন্ধু এবং ভাগ্নের এই ছবিটি আমি তুলে দেই।’

মূলত, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় রাজধানী ঢাকার বনানী অঞ্চলে তুহিন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বন্যার পানিতে জাল দিয়ে মাছ ধরা এক ব্যক্তিরছবি তোলেন। ছবিটিতে ওই ব্যক্তির হাতে থাকা জালে কিছু মাছও দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটি বিভিন্ন সময় তুহিন আহমেদ ও তার বড় ভাই বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন। তবে সম্প্রতি, ওই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করে দাবি করা হয়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকার বনানীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ পাওয়া গিয়েছিল। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবির ব্যক্তির হাতে থাকা জালের মাছগুলো ইলিশ মাছ নয়। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ভিন্ন ভিন্ন জাতের কিছু দেশী মাছ।

সুতরাং, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকার বনানীতে জাল ফেলে ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র Facebook Group: Post
  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

আরও পড়ুন

spot_img