ভারতে নিহত এমপি আনোয়ারুল আজীমের লাশের ছবি দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার

গত ১২ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। পরিবারের দাবি, এরপর।দিন থেকে তার সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর গতকাল (২২ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার অদূরে নিউটাউনে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী।এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের ছবি দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের ছবি নয় বরং ঝিনাইদহেরই ভিন্ন ব্যক্তির লাশের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, আজীমের খুনের বিষয় নিশ্চিত করলেও এখন অবধি ভারতীয় পুলিশ তার লাশ বা মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Zaved Iqbal Zordern নামক ফেসবুক পেজে গত ২১ মে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison: Rumor Scanner

জাভেদ ইকবাল জর্ডান উক্ত ফেসবুক পোস্টে জানান, গত ২১ মে তার বড় বোনের একমাত্র ছেলে আসিফ পারভেজ স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি ঝিনাইদহ জেলার হামদহ খন্ধকার পাড়া এলাকার বাসিন্দা।

এছাড়া, গত ২৩ মে আলোচিত ছবির বিষয়ে জাভেদ ইকবাল জর্ডান এর ফেসবুকে আরো একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন।

Screenshot: Facebook

উক্ত পোস্টে জাভেদ ইকবাল জর্ডান বলেন, “ফরহাদ রেজা নামক একটি আইডিতে আমার ভাগিনার লাশের ছবি নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারুল সাহেবের লাশের ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।”

ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে জাভেদ ইকবালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ কি উদ্ধার হয়েছে?

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেশিয় ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম নাগরিক টিভির ফেসবুক পেজে গতকাল ২২ মে এমপি আজীমের বিষয়ে প্রকাশিত  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আইজি অখিলেশ চতুর্বেদীর বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, এ ঘটনার তদন্ত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাতে নিয়েছে। আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে কেউ হত্যা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, “লাশ এখনো উদ্ধার করা হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি।”

ভারতীয় জাতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে গতকাল ২২ মে “বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ‘খুনে’ পরতে পরতে রহস্য! তদন্তভার হাতে নিয়েই অকুস্থলে সিআইডি কর্তা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আইজি অখিলেশ চতুর্বেদীর একই মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গতকাল ২২ মে (হালনাগাদ, ২৩ মে) ”আনোয়ারুলের মরদেহ উদ্ধার হয়নি, তবে তাঁকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

মূলত, গত ১২ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পরদিন থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর পৃথক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী জানান আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার অদূরে নিউটাউনে খুন হয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের ছবি দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্কানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যা, এটি আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের ছবি নয়। এটি গত ২১ মে ঝিনাইদহে মৃত্যুবরণ করা আসিফ পারভেজ এর ছবি। এদিকে এমপি আজীমের খুনের ঘটনার তদন্ত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) করছে। সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহ এখনও উদ্ধার করতে পারেননি তারা।

সুতরাং, প্রচারিত ছবিটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের নয়। আলোচিত দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

২৫ মে, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে দাবিকৃত তথ্যের বিপরীতে আরেকটি ফেসবুক পোস্টকে সূত্র হিসেবে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img