রোনালদোর ১৮ বছর পর বড় টুর্নামেন্টে ডাগআউটে বসে থাকার দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, “৬৭৪৭ দিন (১৮ বছর) পর পর্তুগালের ডাগআউটে কাটিয়েছেন রোনালদো” শীর্ষক একটি দাবি দেশীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, “দিনের হিসাবে সময়টা হয় ৬৭৪৭ দিন! আর সালের হিসাবে ১৮ বছরেরও বেশি। বড় টুর্নামেন্টে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে এ সময়ের মধ্যে বেঞ্চে রেখে ম্যাচ শুরু করেনি পর্তুগাল। সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালের ইউরোতে রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে।” 

অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে, ১৮ বছর পর এই প্রথম সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সুপার সিক্সটিনের ম্যাচে রোনালদো পর্তুগালের মূল একাদশের বাইরে ডাগআউটে বসে কাটিয়েছেন।  

গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো (প্রতিবেদন ১), প্রথম আলো (প্রতিবেদন ২), কালের কন্ঠ, দেশ রূপান্তর,  লাইভ নিউজপেপার ২৪, দৈনিকআমাদের সময়, জুম বাংলা, ডেইলী স্টার, বিডি২৪ রিপোর্টসময় নিউজ, আরটিভি (প্রতিবেদন ১), আরটিভি (প্রতিবেদন ২), একাত্তর টিভি, সমকাল, ঢাকা মেইল, মানবজমিন, এবিনিউজ২৪, সাম্প্রতিক দেশকাল এবং ভোরের কাগজ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রোনালদোর ১৮ বছর পর বড় টুর্নামেন্টে ডাগআউটে বসে থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং ১৪ বছর পূর্বে, ২০০৮ সালেও তাকে পুরো ম্যাচ ডাগআউটে বসে থাকতে হয়েছিল।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে পর্তুগাল। এই ম্যাচে মূল একাদশে শুরুতে ছিলেন না পর্তুগালের অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রোনালদো।

এই ঘটনার পরই “রোনালদোর ১৮ বছর পর বড় টুর্নামেন্টে ডাগআউটে বসে কাটিয়েছেন” এমন একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিতে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে পর্তুগিজ এবং ব্রাজিলিয়ান ফুটবল পরিসংখ্যান ভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘OptaJoao’ এর গত ৬ ডিসেম্বর আলোচিত ম্যাচটি শুরুর পূর্বে প্রকাশিত একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। 

টুইটে বলা হয়, “ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২০০৮ সালের (সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে) পর প্রথমবারের মতো বড় টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ + ইউরো) পর্তুগালের হয়ে একটি ম্যাচের শুরুতে থাকবেন না। এর মধ্যে ৩১টি ম্যাচ চলে গেছে।”

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘CNN’ এর ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও একই তথ্য এসেছে। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

পরবর্তীতে ইউরোপিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন ‘UEFA’ এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৬ জুন ‘ইউরো ২০০৮’ এর গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার সময় পর্তুগালের শুরুর একাদশে ছিলেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বদলি হিসেবেও পরবর্তীতে মাঠে নামানো হয়নি তাকে। পুরো ম্যাচ ডাগআউটে বসেই কাটাতে হয়েছিল রোনালদো। 

অর্থাৎ, বড় টুর্নামেন্টে ১৮ বছর মূল একাদশ থেকে রোনালদোর বাদ পড়ার যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ১৪ বছর পূর্বে ইউরো’র মতো বড় টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও একাদশের বাইরে ছিলেন রোনালদো।

তাছাড়া, ২০০৪ সালে ‘ইউরো ২০০৪’ এর গ্রুপপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রাশিয়ার বিপক্ষে শুরুর একাদশে ছিলেন না রোনালদো। ম্যাচের ৭৮ মিনিটের সময় মাঠে নামানো হয় তাকে।

মূলত, চলমান কাতার বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুর একাদশে ছিলেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রোনালদোকে সর্বশেষ বড় টুর্নামেন্টে ডাগআউটে বসে (পুরো ম্যাচ) কাটাতে হয়েছিল ১৪ বছর পূর্বে, ২০০৮ সালের ইউরোতে। তবে রোনালদো শুরুর একাদশে জায়গা না পেলেও পরবর্তীতে বদলী হিসেবে মাঠে নামার সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল ১৮ বছর পূর্বে, ২০০৪ সালে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান বিশ্বকাপে রোনালদোর শুরুর একাদশে জায়গা না পাওয়াকে কেন্দ্র করে “রোনালদোকে ১৮ বছর পর ডাগআউটে বসে কাটাতে হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।

প্রসঙ্গত, চলমান কাতার ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, রোনালদোর ১৮ বছর পর বড় টুর্নামেন্টে ডাগআউটে বসে থাকার একটি দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img