সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “চট্টগ্রাম জেলা শিবিরের সভাপতি কে কুপিয়ে হত্যা করেছে বি এন পি”। কিছু পোস্টে হত্যাকারী ছাত্রদল উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, কিছু পোস্টে একটি ভিডিওও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা শিবির নামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো শাখা নেই। চট্টগ্রামে শিবিরের ৪টি জেলা শাখা রয়েছে এবং যার কোনোটারই সভাপতি সম্প্রতি খুন হননি। এ বিষয়ে প্রচারিত ভিডিওটিও ২০২৪ সালে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের যা আলোচিত দাবির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়। ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চে করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বাংলানিউজ২৪’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে প্রদর্শিত দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ‘বাংলানিউজ২৪’ এর ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বেইলি রোডে আগুন: ঢামেকে লাশের সারি। ৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বার্ন ইউনিট ও ঢামেক ”।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) রাত পৌনে ১০টার দিকে (রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে) আগুন লাগে। আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।”
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতের এবং আলোচিত দাবির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।
পরবর্তীতে ‘চট্টগ্রাম জেলা শিবির’ নামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো জেলা শাখা আছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওয়েবসাইটে শিবিরের সব শাখার নামের একটি তালিকা পাওয়া যায়। তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করলে ‘চট্টগ্রাম জেলা শিবির’ নামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো জেলা শাখার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রামে শিবিরের চারটি জেলা শাখার উল্লেখ পাওয়া যায় যেগুলোর নাম: ‘চট্রগ্রাম জেলা পশ্চিম’, ‘চট্রগ্রাম জেলা পূর্ব’, ‘চট্রগ্রাম জেলা দক্ষিণ’, ‘চট্রগ্রাম জেলা উত্তর’। এছাড়া, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ’ ও ‘চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর’ নামে আরো ৩টি সদস্য শাখা পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে চট্টগ্রাম জেলায় শিবিরের কোনো সভাপতি খুন হওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ‘আজিজুর রহমান আজাদ’ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৮ আগস্টে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রশিবির সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন একটি নিউজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি সত্য নয়, একটি চক্র পরিকল্পিত প্রোপাগাণ্ডার অংশ হিসেবে এমন খবর প্রচার করছে। বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ।”
সুতরাং, চট্টগ্রাম জেলা শিবিরের সভাপতিকে বিএনপি কুপিয়ে হত্যা করেছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- banglanews24.com – বেইলি রোডে আগুন: ঢামেকে লাশের সারি।…
- Prothom Alo – ঢাকার বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জন, এ পর্যন্ত যা জানা গেল
- Bangladesh Islami Chhatrashibir – জেলা শাখা
- Bangladesh Islami Chhatrashibir – সদস্য শাখা
- Azizur Rahman Azad – Facebook Post