বুর্জ খলিফায় অগ্নিকাণ্ডের গুজব

সম্প্রতি, বিশ্বের অন্যতম উঁচু ভবন বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার দাবিতে দুইটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

বুর্জ খলিফা

দুবাই বুর্জ খলিফা আর নেই এমন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওগুলোর একটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ বার। ভিডিওতে প্রায় ৪৬ হাজার ১০০ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৩৩ বার। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুর্জ খলিফায় আগুন লেগেছে দাবিতে টিকটকে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে উক্ত দাবিতে ভাইরাল ভিডিও দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি।

ভিডিও যাচাই – ০১

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংবাদিক মুহাম্মদ বিন আল-নাওয়াইফের এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) গত ৫ এপ্রিল “Fake News Alert” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত বুর্জ খলিফা বিল্ডিং এর ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টে তিনি ছবিটি শেয়ার করে বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার খবরটি ভুয়া বলে উল্লেখ করেন। 

এছাড়া, উক্ত পোস্টের মন্তব্য ঘরে আলোচিত ছবিটি সম্পর্কে ইন্ডিয়ান একজন ফ্যাক্টচেকারের জানতে চাওয়ার প্রতিত্তোরে তিনি আরও বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে আমি নিশ্চিত করতে পারি। এই ছবিগুলো শুধু পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভাইরাল হয়েছে কারণ তারা ক্রস-চেকিংয়ে বিশ্বাস করেনা এবং তারা জঙ্গলে আগুন লাগার মতো করে জিনিস ছড়িয়ে দেয়”।

Screenshot : X Post 

অর্থাৎ, বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার দাবিতে প্রচারিত এই ছবিটি বাস্তব নয়। 

ভিডিও যাচাই – ০২ 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘Ladodosi’ নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ২৪ জানুয়ারি মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশনে থাকা বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, ভিডিওটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি। 

Screenshot : TikTok 

পরবর্তীতে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি আরও বহু ডিজিটাল আর্টওয়ার্কের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

অর্থাৎ বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার দাবিতে প্রচারিত দুইটি ভিডিওই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। 

এছাড়া, বিশ্বের অন্যতম উঁচু ভবন বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার কোনো ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়া স্বাভাবিক। তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে বুর্জ খলিফায় আগুন লাগার দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত কয়েকদিন যাবত ইন্টারনেটে দুইটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম উঁচু ভবন বুর্জ খলিফায় আগুন লেগেছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়।আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি দুইটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি অগ্নিকাণ্ডের দুটি ভিডিওকে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় অগ্নিকাণ্ডের বাস্তব দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে: যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Muhammad Bin An Nawaif : X post 
  • Ladodosi : TikTok Post
  • Rumor Scanner Own Analysis  

আরও পড়ুন

spot_img