সম্প্রতি “আলহামদুলিল্লাহ্! বিশ্বে এই প্রথম হিজাবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন জামায়াতে তাবলীগ এর আমীর!” শীর্ষক শিরোনামে কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের প্রথম হিজাবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবিতে প্রচারিত ছবি ও ভিডিওতে থাকা তথ্যটি সঠিক নয় বরং ছবি ও ভিডিওগুলো এবিট লিও নামে একজন মালেয়শিয়ান ইসলাম ধর্মপ্রচারকের ফেসবুক পেইজ থেকে নিয়ে মনগড়া শিরোনামে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মালেয়শিয়ান গণমাধ্যম Malaysia Post এ গত ১২ সেপ্টেম্বর “Ebit Lew held a talk in front of 6,000 Islamic science school students in Yala” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এবিট লিউয়ের ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে প্রতিবেদনটিয়ে বলা হয়, এবিট লিউ থাইল্যান্ডের ইয়ালাতে অবস্থিত ৭৫ বছরের পুরানো বৃহত্তম ইসলামিক সায়েন্স স্কুল থামাভিতায়া মৌলনিতি স্কুলে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর সামনে ১৭ সেপ্টেম্বর ধর্মীয় বক্তব্য দিবেন৷
পরবর্তীতে এবিট লিউয়ের ফেসবুক পেইজে ১২ সেপ্টেম্বর “Pray for the lecture at Thamavitya Mulniti School Yala Thailand. Hj Haroon School. Largest Islamic Science School in Thailand. 6 thousand students. 75 years of school. Ustaz Adnan inherited from the family. Teacher and child are good here. Tonight at Prince of Songkla Patani University. (থাইল্যান্ডের ইয়ালাতে অবস্থিত ৭৫ বছরের পুরানো বৃহত্তম ইসলামিক সায়েন্স স্কুল থামাভিতায়া মৌলনিতি স্কুলে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর সামনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দোয়া চাই। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভালো। আজ রাতে শুকলা পাতানি বিশ্ববিদ্যালয়ে)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও ও কিছু ছবি সম্বলিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
মালেয়শিয়ান গণমাধ্যমের সংবাদ ও এবিট লিউয়ের ফেসবুক পোস্টগুলোর কোথাও বিশ্বের প্রথম হিজাবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে এবিট লিউয়ের ফেসবুক পোস্টগুলোতে উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, থামাভিতায়া মৌলনিতি স্কুলটি ১৯৫১ সালের ১৪ জুন থাইল্যান্ডের ইয়ালা প্রদেশে একটি ইসলামিক স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে৷ বর্তমানে স্কুলটিতে ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা দুইটিই দেওয়া হচ্ছে।
এই স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ও সাধারণ শিক্ষা দেওয়া হয় প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত৷ অর্থাৎ এটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয় এবং এর সঙ্গে এবিট লিউয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
অপরদিকে Prince of Songkla University সম্পর্কে জানা যায়, এটি থাইল্যান্ডের পাতানি প্রদেশে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ঘেটেও এর সঙ্গে এবিট লিউয়ের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, মালেয়শিয়ান ইসলাম ধর্মপ্রচারক এবিট লিউ গত ১২ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের ইয়ালা প্রদেশে অবস্থিত ৭৫ বছরের পুরানো বৃহত্তম ইসলামিক সায়েন্স স্কুল থামাভিতায়া মৌলনিতি স্কুলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দোয়া চেয়ে কিছু ছবি ও ভিডিও তার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেন। তার শেয়ারকৃত এই ছবি ও ভিডিওগুলোই পরবর্তীতে বিশ্বের প্রথম হিজাবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে৷ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বের প্রথম হিজাবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Malaysia Post: Ebit Lew held a talk in front of 6,000 Islamic science school students in Yala
- Ebit Lew Facebook Post: Ebit Lew Post
- Prince of Songkla University: University website
- Thamavitya Mulniti School: https://www.tvm.ac.th/