সম্প্রতি ‘ভারতের চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে ফ্রি ট্রেড চুক্তি করতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা!!’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে আর্জেন্টিনার ফ্রি ট্রেড চুক্তি করতে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সঠিক নয় বরং দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই ভিডিওগুলোতে উল্লেখিত তথ্যসমূহ যাচাই করে।
যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওগুলোতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা দূতাবাস পুনঃস্থাপনের ব্যাপারে দেশটির আগ্রহ ও পরিকল্পনা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিয়েরোকে উদ্ধৃত করে ভিডিওগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার রফতানি ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পণ্য রফতানিতে ঝামেলা পোহাতে হয় এবং ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের মাধ্যমে কাজ চালাতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে আর্জেন্টিনার কোনো বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। বিপরীতে ভারত কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই আর্জেন্টিনায় তাদের পোশাক রফতানি করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু হলে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিওগুলোতে উল্লেখিত তথ্যসমূহের বাইরে আর্জেন্টিনার ভারতের সাথে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে ফ্রি ট্রেড বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
বিপরীতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশিদের আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে সমর্থনকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনা ২০২৩ সালে ঢাকায় দূতাবাস চালু করতে যাচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে এই ঘোষণা দেন।

চিঠিতে আলবার্তো বলেন, ২০২৩ সালে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
পাশাপাশি রিউমর স্ক্যানারের অধিকতর অনুসন্ধানেও সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনার বাংলাদেশে দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি ব্যতীত ভারতের সাথে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে ফ্রি ট্রেড বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু হলে দক্ষিণ আমেরিকাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মূলত, কাতারে সদ্য শেষ হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনাকে সমর্থনকে উপলক্ষ করে দেশটি বাংলাদেশে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দূতাবাস খুলেছিল আর্জেন্টিনা৷ ১৯৭৮ সালে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু রাখে দেশটি। সম্প্রতি নতুন করে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতটিকেই ভারতের চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে ফ্রি ট্রেড চুক্তি করতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ভারতের চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের সাথে আর্জেন্টিনার ফ্রি ট্রেড চুক্তি করতে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ajker Patrika: আগামী বছর ঢাকায় দূতাবাস খুলবে আর্জেন্টিনা: প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দেজ
- Daily Prothom Alo: ২০২৩ সালে ঢাকায় দূতাবাস খুলছে আর্জেন্টিনা
- DW Bangla: ফুটবলের কল্যাণে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার সম্পর্কে গভীরতা
- Rumor Scanner Own Analysis