বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যুদ্ধের দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “বাংলাদেশ মিয়ানমার যুদ্ধ হলে কে জিতবে, আক্রমণ চালালে মিয়ানমারকে ছাড়া দেবে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশ মিয়ানমার যুদ্ধের কোনো ভিডিও নয় বরং বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও মহড়ার তিনটি ভিডিও একত্রে যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিডিওটির প্রথম ১মিনিট ৩৪ সেকেন্ড অংশের স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ‘BD Proud Soldier’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১ আগস্ট “Bangladesh Army Training 81-LMG Firing” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত হুবহু একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ভিডিওর ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ১ সেকেন্ডের অংশের স্থিরচিত্র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি ‘F&R Motion’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১ জুন “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র প্রশিক্ষণ” শীর্ষক শিরোনামের ভিডিওর সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from F&R Motion youtube channel

ভিডিওর ২ মিনিট ২ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের অংশের স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘InFormative Bangla’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ জুন “সরাসরি দেখুনঃ শত্রুর উপর যেভাবে গর্জে উঠবে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি গোলা” শীর্ষক শিরোনামের প্রচারিত ভিডিওর ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, গত কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর থেকেই এই ইস্যুতে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। এছাড়াও মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশের ঘটনাও ঘটে। এসকল ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ মিয়ানমার যুদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং মহড়ার ভিডিও একত্রিত করে যুদ্ধের দাবিতে প্রচারিত হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ব্যপক হারে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনার গণমাধ্যমে হরহামেশাই সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ না করার ইচ্ছা থেকেই বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সীমান্তে আইন লঙ্ঘনের চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার শেল এবং আকাশপথে হেলিকপ্টার দিয়ে সীমান্তে প্রবশের মতো ঘটনা ঘটেছে।

সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার তিনটি ভিডিওর খন্ডিত অংশ একত্রিত করে একটি ভিডিও সম্পাদন করে বাংলাদেশ মিয়ানমার যুদ্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img