রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটকের গুজব

গত ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র গোষ্ঠী সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনারই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি, রুমায় ব্যাংক ডাকাতি সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস, পুলিশ কে ধরলো সেনাবাহিনী শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

রুমায়

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে এক লক্ষ ১৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসমন্ধানে জানা যায়, বান্দরবানের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক কোনো পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়নি বরং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশকে আটক করার দাবি সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ভিডিও কিংবা বক্তব্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রথম দিকের ক্লিপটিতে প্রদর্শিত বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম News 24 এর লোগো’র সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে News 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ এপ্রিল “ব্যাংক লুটের ঘটনায় অভিযানে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র গোষ্ঠী সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এই তথ্যের ভিত্তিতেই নিউজ ২৪ এর সংবাদ পাঠক তাদের স্থানীয় প্রতিবেদকের সাথে স্টুডিও থেকে লাইভে যুক্ত হয়ে কথা বলেন। তবে প্রতিবেদক উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ আটক হওয়ার কোনো তথ্য জানান নি।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া MY TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ এপ্রিল “যশোরে পুলিশের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুইজন নাগরিক আহত হওয়ার ঘটনায় ফলো-আপ নিউজের জন্য হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশ বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া সময় টিভির যশোর প্রতিনিধিকে হেনস্থা করে। তবে, এই প্রতিবেদনে সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ আটক হওয়ার কোনো তথ্য জানা যায়নি।

ভিডিও যাচাই: ০৩

কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া Somoy TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ এপ্রিল “পুলিশের ছদ্মবেশে নারীদের টার্গেট!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, রাজধানীতে পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে নারীদের ধর্ষণ এবং ছিনতাইকারীর একটি গ্রুপকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই প্রতিবেদনেরও কোথাও সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার সাথেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া, আলোচিত দাবিটি প্রচারের পূর্বে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বান্দরবানে রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটক হওয়া কিংবা অন্য কেউ আটক হওয়ার বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বম সম্প্রদায়ের তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ৮ এপ্রিল বান্দরবান জেলা পুলিশের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতের বরাতে এই তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মূলত, গত ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র গোষ্ঠী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম বান্দরবানে নিউজ ২৪ এর সাংবাদিক স্টুডিওতে কথা বলেন। এছাড়া বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুইজন নাগরিক আহত হওয়ার ঘটনায় ফলো-আপ নিউজের জন্য হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশ বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া সময় টিভির যশোর প্রতিনিধিকে হেনস্থা করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সেসময় বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মাইটিভির ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। একইদিনে রাজধানীতে পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে নারীদের ধর্ষণ এবং ছিনতাইকারীর একটি গ্রুপকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যা বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি, উক্ত পৃথক তিনটি সংবাদের ভিডিও ফুটেজ একত্রে যুক্ত করে বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিটি প্রচারের পূর্বে বান্দরবানে রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটক হওয়া কিংবা অন্য কেউ আটক হয়নি।

সুতরাং, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজ যুক্ত করে বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img