সম্প্রতি “বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচের সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

কী দাবি করা হচ্ছে?
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, “আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বরাদ্দ অনুসারে ২৭ অক্টোবর সিডনির বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।”
কিছু গণমাধ্যম বলেছে, “২৭ অক্টোবর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিটও। ভারত এবং ‘এ’ গ্রুপ রানারআপ দলের ম্যাচের টিকিটও শেষ।”
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন – চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর (আর্কাইভ), Cricfrenzy (আর্কাইভ), bdcrictime (আর্কাইভ), জাগো নিউজ (আর্কাইভ), ইত্তেফাক (আর্কাইভ), একুশে টিভি (আর্কাইভ), মানবজমিন (আর্কাইভ), মাইটিভি (আর্কাইভ), সমকাল (আর্কাইভ), দেশ রুপান্তর (আর্কাইভ), নয়া দিগন্ত (আর্কাইভ), যমুনা টিভি (আর্কাইভ), ভোরের কাগজ (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট শেষ হওয়া বিষয়ক তথ্যটি পুরোপুরি সঠিক নয় বরং এক টিকিটে একই মাঠে দিনের দুইটি ম্যাচ দেখার সুবিধা থাকায় ঐ দিন ভারতের ম্যাচের দর্শকরাও একই টিকিট ক্রয় করেছেন।
সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে সূত্র হিসেবে উল্লিখিত আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তির খোঁজে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আলোচিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২৭ অক্টোবর সিডনী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (SCG) বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত-গ্রুপ এ রানার আপ ডাবল-হেডার ম্যাচের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।”

পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট শেষ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবদেনে বলা হয়, “বাংলাদেশ–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়ে এত আগ্রহ কেন—এমন প্রশ্ন কারও কারও মনে জাগতেই পারে। আসলে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন একই মাঠে খেলা আছে ভারতেরও। আর এবার এক সঙ্গে এক ম্যাচ দিবসে থাকা দুটি ম্যাচের টিকিট একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২৭ অক্টোবর হয়তো বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারত ও এ গ্রুপের রানার্সআপ দলের ম্যাচ মিলিয়েই এত টিকিট বিক্রি হয়েছে।”

এই তথ্যের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আইসিসির ওয়েবসাইটে ICC Men’s T20 World Cup 2022 FAQ’s শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। প্রশ্ন-উত্তর বিষয়ক উক্ত প্রতিবেদনের ৪২ নং প্রশ্নের উত্তরে আইসিসি জানায়, “আপনি যখন কোনো ভেন্যুর একটি ম্যাচের জন্য টিকিট কিনবেন তখন আপনি একই মাঠে ঐ দিনের অন্য ম্যাচটিও দেখার সুযোগ পাবেন। এজন্য আপনি গেট খোলার সময় থেকে যে কোন সময় ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারেন।”

অর্থাৎ, এক টিকিটেই একই দিনের একই ভেন্যুর দুইটি ম্যাচই উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা।
টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চলতি বছরের টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ১৬ অক্টোবর। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে ২৪ অক্টোবর, গ্রুপ ‘এ’ থেকে রানারআপ হয়ে আসা দলের বিপক্ষে। এই ম্যাচ ছাড়াও গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রুপ বি জয়ী দল, ভারত এবং পাকিস্তান। এই আসরে বাংলাদেশের দলের নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান।

মূলত, আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী টি২০ বিশ্বকাপে একই দিন একই মাঠের দুইটি ম্যাচের জন্য একটি টিকিটই বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ, ২৭ অক্টোবর সিডনীতে বাংলাদেশ – দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত-গ্রুপ এ রানার আপ ম্যাচ দুইটি এক টিকিটেই দেখতে পাবেন দর্শকরা। ক্রিকেট প্রিয় ভারতীয় দর্শকরা তাই এই ম্যাচের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু এক টিকিটে দুই ম্যাচ দেখার নিয়মটি উল্লেখ না করে বাংলাদেশ – দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের টিকিট শেষ দাবি করে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পুরানো একটি স্টেডিয়াম। ১৮৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠে টি২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরে একটি সেমিফাইনালসহ ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মাঠটির দর্শক ধারণক্ষমতা সাড়ে ৪২ হাজার জন।
প্রসঙ্গত, ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার ম্যাচ ব্যতিত এবারের আসরের অন্য সকল ম্যাচের অতিরিক্ত টিকিট ছেড়েছে আইসিসি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আইসিসির দেওয়া এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত-গ্রুপ এ রানারআপ ম্যাচের ক্ষেত্রেও এই অতিরিক্ত টিকিট পাওয়ার সুবিধা মিলবে।
সুতরাং, টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট বিক্রির তথ্যটি আংশিক মিথ্যা।