সম্প্রতি, “পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র সঞ্চারণশীল মহাদেশ নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশই সঞ্চারণশীল।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “Australia Is Drifting So Fast GPS Can’t Keep Up” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, পৃথিবীর সকল মহাদেশ ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এই টেকটোনিক প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত সঞ্চারণশীল। টেকটোনিক প্লেটের এই স্থানচ্যুতির কারণেই প্রতিনিয়তই মহাদেশগুলো নিজ স্থান থেকে খানিকটা সরে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত প্রতিবছর নিজ স্থান থেকে ২.৭ ইঞ্চি সরে যাচ্ছে। আবার উত্তর আমেরিকার স্থানচ্যুতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১ ইঞ্চি। একইভাবে প্যাসিফিক প্লেট বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি দূরে সরে যাচ্ছে।

নিবন্ধ থেকে এও জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত তা তুলনামূলক দ্রুত গতিতে সঞ্চারিত হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে জিপিএস স্থানাঙ্কের সর্বশেষ সমন্বয়ের পর থেকে সে নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান প্রায় ৪.৯ ফুটের মতো সরে গেছে।
অর্থাৎ, পৃথিবীর সকল মহাদেশেরই কমবেশি স্থানচ্যুতি ঘটছে।
এছাড়াও, Ireland Geological Survey এর ওয়েবসাইটে “The Earth through time” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সঞ্চারণ ঘটে চলেছে। টেকটোনিক প্লেট সমূহের ক্রমাগত স্থানচ্যুতি ও সঞ্চারণের ফলেই পৃথিবী পৌঁছেছে আজকের অবস্থায়।
এছাড়াও, নিবন্ধটিতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মহাদেশগুলোর অবস্থানও দেখানো হয়েছে।
এছাড়াও, New Scientist নামের বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২ মার্চ “Watch how the continents have shifted over the past 100 million years” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত নিবন্ধের সাথে সংযুক্ত ভিডিওতে গ্রাফিক্সের সাহায্যে গত ১০০ মিলিয়ন বছরে পৃথিবীর মহাদেশগুলোর অবস্থান পরিবর্তন ও এর গতিপথ চিত্রায়িত করা হয়েছে।
মূলত, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ যে টেকটনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত সেটি তুলনামূলক দ্রুত গতিতে সঞ্চারিত হচ্ছে। এ ঘটনাকেই সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর মহাদেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের ওপর মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে সঞ্চারণশীল অবস্থায় আছে এবং মহাদেশগুলোর এ সঞ্চারণশীলতা এখনও চলমান।
সুতরাং, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথিবীর একমাত্র চলন্ত মহাদেশ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- National Geographic: “Australia Is Drifting So Fast GPS Can’t Keep Up”
- Ireland Geological Survey: “The Earth through time”
- New Scientist: “Watch how the continents have shifted over the past 100 million years”