সম্প্রতি, “৩০ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো অস্ট্রেলিয়া, মাহা বিপদে শেখ হাসিনা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

যা দাবি করা হচ্ছে
ভিডিওটির থাম্বনেলের লেখায় দাবি করা হচ্ছে যে ৫ শর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো অস্ট্রেলিয়া, মাহা বিপদে শেখ হাসিনা’।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও পরবর্তীতে ফেসবুকেও শেয়ার হয়। এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ শর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি দেওয়ার খবরটি উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওর শুরুতে ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান’ শীর্ষক একটি সংবাদ শিরোনাম দেখা যায় এবং একই দাবিতে ভিডিওটির ১২ সেকেন্ড থেকে ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানা বক্তব্য দেন।
পরবর্তীতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখানো শিরোনাম এবং রুমিন ফারহানার বক্তব্যের প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ৪ অক্টোবর “অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান” শীর্ষক হুবহু শীরনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জন এমপি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার এমপিরা বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যেকোনো কাজকে উদ্বেগজনক মনে করি। এরমধ্যে আছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে মত প্রকাশে বাঁধা দেয়া। এমন অবস্থায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদেরও অনুরূপ নীতি প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক দৈনিক যুগান্তর এ গত ৪ অক্টোবর “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান অস্ট্রেলিয়ার ১৫ এমপির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ভেতরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ জন এমপির চিঠি লেখার তথ্য থাকলেও ভিডিওটির শিরোনাম এবং টাইটেল ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশি কোনো গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রকাশিত কোনো সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জন এমপি চিঠি দেন। তবে সম্প্রতি এই বিষয়টিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত ভিসা নীতির আওতায় নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের নাম বা তালিকা প্রকাশ করেনি।
উল্লেখ্য, পূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে বিষয়গুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন :
সুতরাং, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ জন এমপির চিঠি লেখার খবরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Manab Zamin – অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান
- Jugantor – বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান অস্ট্রেলিয়ার ১৫ এমপির
- Australia Embassy – Website
- Rumor Scanner’s own analysis